সেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের হাসিতে হতবাক আইনজীবীরা
ইমান২৪.কম: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এলএসডিসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফ (২০), এসএম মনোয়ার আকিব ওরফে আনান (২০), নাজমুস সাকিব (২০), নাজমুল ইসলাম (২৪) ও বিএম সিরাজুস সালেকীন ওরফে তপু (২৪)। তাদের কাছ থেকে দুই হাজার মাইক্রোগ্রাম ওজনের ১২ পিস ব্লটার পেপার, এলএসডি বিক্রির নগদ ৪৬ হাজার টাকা, একশ মার্কিন ডলার, গাঁজা, মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৯ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে এরা পুলিশের কাস্টডিতে থাকা অবস্থায় যে আচরণ করছিল তা মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। কারণে অকারণে হাসছিল তারা। মনে হচ্ছিল তারা বেশ আনন্দদায়ক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের এই আচরণ নেটিজেনদের মধ্যে কৌতুহল ও বিস্ময় তৈরি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বলেছেন, ভয়ংকর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) সেবনের প্রভাবে তারা আদালতে হাস্যজ্জ্বল আচরণ করেছে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। তাই তরুণ সমাজ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রকে সচেতনতার সঙ্গে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন এ সমাজবিজ্ঞানী।
এদিকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি সেবন ও বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ সময় সোমবার (৩১ মে) দুপুরে আদালতে হাজির মাদক মামলায় গ্রেপ্তার তরুণদের হাস্যজ্জ্বল থাকায় হতবাক করেছে সবাইকে। আদালতে হাজির করার পরও তাদের আচরণে এতটুকুও বদলায়নি।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মাদকের প্রভাব এতটাই পড়েছে যে, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন তারা। ভয়াবহ মাদক এলএসডিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার ৫ তরুণকে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টন থানায় যখন নেয়া হয় তখনও সবার মুখেই ছিল হাসি। এমনকি সোমবার (৩১ মে) দুপুরে যখন আদালতে তোলা হয় তখনও বদলায়নি তাদের আচরণ। অপরাধবোধ তো দূরের কথা তাদের মধ্যে যেন কোনো অনুশোচনাও নেই। এমনকি রিমান্ড মঞ্জুরের পরও তাদের চেহারায় নেই উদ্বেগের কোনো ছাপ। এ ঘটনায় আইনজীবীরাও হতবাক হয়েছেন। তারা বলছেন- বহু আসামি দেখেছেন। কিন্তু এরকম বিকারগ্রস্ত আসামি কোনোদিন তারা দেখেননি।
সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, এ তরুণদের বাবারা অনেক টাকাওয়ালা, তাই তারা মনে করেছেন তাদের কিছুই হবে না। অচিরেই তারা খালাস পাবে বা মুক্তি পাবে। পরিণতি সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। সে কারণে তারা হাসিখুশি ও ভাবলেস অবস্থায় আছে। আমরা সেটাই লক্ষ্য করেছি।
রোববার মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এক বছর ধরে এলএসডি সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন। দুই হাজার মাইক্রোগ্রাম এলএসডি, আইস ও গাজা জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এক বছর ধরে অনলাইনে এলএসডি বেচাকেনা করছে তারা। কুরিয়ার ও লাগেজের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এলএসডি দেশে নিয়ে আসা হয়। অনলাইনে গ্রাহক সংগ্রহ করে এলএসডি ব্যবসায়ীরা। সেবনকারীদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে রাজধানী থেকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- সাদমান সাকিব ওরফে রুপল (২৫), অসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩)। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে (বিবিএ) পড়েন।