রিকশাচালকদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাঁধা
ইমান২৪.কম: ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান নিষিদ্ধের ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মী তথা ব্যাটারি রিক্সাচালকরা। আজ রবিবার (২৭ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষ করে একটি মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে জিরো পয়েন্ট মোড়ে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সমাবেশে শ্রমিকরা বলেন, গত ২০ জুন সচিবালয়ে জাতীয় সড়ক পরিবহন টাস্কফোর্সের সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সারা দেশে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
পরবর্তিতে সারা দেশে কয়েক লক্ষ শ্রমিকের রুটি-রুজি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি গ্যারেজ ও বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দরিদ্র রিকশাওয়ালাদের রিক্সা, ব্যাটারি, মোটর, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই সকল ব্যাটারি, মোটর যন্ত্রাংশ আমদানি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন নিষেধ ছিল না। গরিব রিকশাওয়ালারা সুদের উপর কিস্তিতে কিংবা সঞ্চয় ভেঙ্গে রুটি-রুজির জন্য ব্যাটারি রিকশা কিনেছে। শ্রমিকরা বাণিজ্যিক দরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে। কোন ধরনের সংস্কারমূলক প্রস্তাব বিবেচনায় না নিয়ে এই বন্ধের ঘোষণা লক্ষ শ্রমিককে আজ পথে বসিয়ে দিয়েছে।
তারা আরও বলেন, রিকশা একটি জৈব জ্বালানি বিহীন পরিবেশ বান্ধব বাহন। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাহন বলে আমরা এটা নিয়ে নানাভাবে গর্ব করে থাকি। অথচ রিকশা চালকদের অমানবিক পরিশ্রম ও কষ্ট লাঘবে রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিক মহল, কাউকেই তেমন কিছু করতে দেখা যায় না। বিজ্ঞান প্রযুক্তির ছোয়ায় জল, স্থল এবং আকাশ পথে সকল যান রূপান্তরিত হয়ে আধুনিক থেকে আধুনিকতম হলেও রিকশা নামক অতিসাধারণের এই বাহনটি আদি থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
সেখানে তারা জানান, ন্যানো টেকনোলজির এই যুগে আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ রিকশা চালক মানুষ হয়ে মানুষকে টানছে। যা আমাদের জাতিকে শুধু লজ্জিতই করে না, আধুনিক সভ্যতাকেও পরিহাস করে। পৃথিবীর কোন দেশে এত সংখ্যক শ্রমিক এ ধরনের অমানবিক পেশার সাথে যুক্ত নয়। যান্ত্রিক উৎকর্ষতার যুগে উন্নত বিশ্বে যখন পশু দিয়ে অতিপরিশ্রমের কাজ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়, সেখানে জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ ভারবাহী পশুর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই রিকশার যান্ত্রিকীকরণ একটি আবশ্যিক মানবিক কর্তব্য।
রিক্সাচালকরা বানিজ্যিক বিদ্যুৎ বিল দিতে রাজি জানিয়ে চালকরা বলেন, বিদ্যুৎ জাতীয় সম্পদ। সুতরাং বৈধ পথে বিদ্যুৎ ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। তাছাড়া রিকশা কোন ব্যক্তিগত বাহন নয়। এটি গণপরিবহনেরই একটি অংশ। গণপরিবহণে বিদ্যুৎ ব্যবহার তার গণস্বার্থকে উপকৃত করবে। কারো ব্যক্তিগত আরাম বা বিলাসিতায় এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে না। ব্যাটারী চালিত প্রত্যেক রিকশা চালক তাঁর ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য বাণিজ্যিক মূল্য দিতে আগ্রহী। তারা দাবি জানিয়ে বলেন, ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকরা সরকারকে রাজস্ব দিতে চায়।
আমাদের দাবি একটি বিধিমালার মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করা হোক।। বুয়েট প্রস্তাবিত রিকশাবডি, এমআইএসটি উদ্ভাবিত গতি নিয়ন্ত্রক, উন্নত ব্রেকসহ ব্যাটারি চালিত রিকশার লাইসেন্স প্রদান করে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান রাস্তায় চলতে দেয়া হোক। ততক্ষণ পর্যন্ত সড়কের বাইরে অন্যান্য রাস্তায় এবং নিচু এলাকায় আঞ্চলিকভাবে ব্যাটারি রিকশা চলতে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। সমাবেশে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাৎ খা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসসহ দুই শতাধিক রিক্সা চালকরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষ ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন।