সুপ্রিম কোর্ট বার ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্নার নির্দেশনা চেয়ে আরও এক আবেদন

ইমান২৪.কম: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অধীনস্থ সকল ক্যান্টিনে গরুর গোশত রান্না ও বিক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। এর আগে একই বিষয়ে আবেদন জানান আইনজীবী মুহাম্মাদ মাহমুদুল হাসান।

বুধবার (২ জুন) অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের বরাবর এ লিখিত আবেদনে করা হয়।

আবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ গরুর মাংস খেয়ে আসছে। রেড মিট হিসেবে গরুর মাংস অনেক স্বাদের এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে খুবই প্রিয় একটি খাবার। বাংলাদেশের মানুষ মাংসের মধ্যে গরুর মাংস খেতেই বেশি পছন্দ করেন। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে।

এগুলো হল প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি টুয়েলভ, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি-৬, আয়রন এবং রিবোফ্লাভিন। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়। আয়রন শরীরের পেশিতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে। ‘ভিটামিন বি টুয়েলভ’ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়। গরুর মাংসের ব্যাপক পুষ্টিগুণ ও প্রোটিন সরবরাহের কথা বিবেচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ‘আধুনিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বৈশ্বিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে পালনকৃত গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। শুধু তা-ই নয়, গবাদিপশুটি পালনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত তথ্য বলছে, সারা বিশ্বে ২০২০ সালে প্রায় ১৪৬ কোটি ৮০ লাখ গরু পালিত হয়েছে। এর মধ্যে ২১ কোটি ১৭ লাখ পালনের মাধ্যমে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারত ১৮ কোটি ৯০ লাখ, তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীন ১১ কোটি ৩৫ লাখ, চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ৮ কোটি ৯২ লাখ এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়ায় ৫ কোটি ৪০ লাখ গরু পালন করেছে। পৃথিবীতে যত গরুর মাংস রফতানি হয়, তার ১৬ শতাংশই ভারত থেকে হয়। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার করা একটি সমীক্ষা বলছে, গরুর মাংস সরবরাহকারী দেশের তালিকায় ভারত তিন নম্বরে। ব্রাজিল প্রথম ও অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোনও দেশে আইন করে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধও করা হয়নি।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, কোনও খাবার খাওয়া কিংবা না খাওয়া যেকোনও মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও রুচির বিষয়। স্বাস্থ্যগত কারণ কিংবা ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে কেউ গরুর মাংস নাও খেতে পারেন। কিন্তু তাই বলে ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগণের দেশে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অধীনস্থ সকল ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না ও বিক্রয় হবে না এটি অত্যন্ত অমানবিক।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যরা অত্যন্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করেন। তাই আইনজীবীদের পুষ্টি নিশ্চিত ও প্রোটিন সরবরাহের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অধীনস্থ সকল ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না ও বিক্রয় করা একান্তভাবে প্রয়োজন। তাই উক্ত আবেদনে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অধীনস্থ সকল ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না ও বিক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না করায় প্রতিবাদ জানায় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সুপ্রিম কোর্ট শাখার নেতৃবৃন্দরা। একইসঙ্গে ক্যান্টিনে গরুর মাংস রান্না বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমিতির বর্তমান কমিটির কাছে আহ্বান জানান তারা। আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি বিভাস চন্দ্র বিশ্বাসসহ চার আইনজীবী ওই আবেদন করেন। আবেদনটিতে স্বাক্ষরকারী অন্য আইনজীবীরা হলেন, আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সম্পাদক অনুপ কুমার সাহা, আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনি ও বাণী অর্চনা পরিষদের আহ্বায়ক জয়া ভট্টচার্য্য এবং সদস্য সচিব মিন্টু চন্দ্র দাস।

ফেসবুকে লাইক দিন