সারাদেশে আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের তান্ডব: লাঠি মিছিল হামলা ভাঙচুর সংঘর্ষ

ইমান২৪.কম: রবিবার সারাদেশে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীদের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন তাদের সমর্থকরা সারাদেশে বিভিন্নভাবে তান্ডব চালিয়েছেন। কোথাও প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কোথাও দোকানপাটে হামলা, কোথাও নিজেদের দলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশ থেকে আরটিএনএন’র প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট।

নেত্রকোনা:

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে মানু মজুমদারকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকরা। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলার গুতুরা বাজার এলাকায় নেত্রকোনা-কলমাকান্দা সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নেত্রকোনা-১ আসনের বর্তমান সাংসদ হলেন আওয়ামী লীগের ছবি বিশ্বাস। এই আসনে এবার ২৬ জন নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

আওয়ামী লীগ এবার ছবি বিশ্বাসকে মনোনয়ন না দিয়ে তার বোনের জামাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মানু মজুমদারকে নৌকা প্রতীক দেয়। অথচ মানু মজুমদারের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এ কারণে কলমাকান্দায় তিনি বহিরাগত হিসেবে পরিচিত।

মানু মজুমদারকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কলমাকান্দার গুতুরা বাজারে লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকরা। একপর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তারা বহিরাগত মানু মজুমদারের পরিবর্তে কলমাকান্দার কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। পুলিশ সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের হটাতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় খায়রুল ইসলাম নামের এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। বিক্ষোভের ফলে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ঝালকাঠি-১: মনোনিত প্রার্থীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাংসদ বজলুল হক (বি এইচ) হারুনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা ঝাড়ু মিছিল করে বজলুল হক হারুনকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজাপুর থানার পাশে উপজেলা যুবলীগের কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটিতে কয়েক দফায় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।

পুলিশ লাঠিপেটা করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নেতাকর্মীরা আবারও জড়ো হয়ে ঝাড়ু– নিয়ে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে যুবলীগ কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন ও রিয়াজ মাতুব্বর, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ডেজলিং, নাসির মৃধা, উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ সিকদার, জাকির হোসেন, হেমায়েত উদ্দিন, মিজানুর রহমান, হুমায়ুন কবির ও আলমগীর চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, বজলুল হক হারুন সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেননি। তিনি টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকার পরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি রাজাকার পরিবারের সদস্য।

এর আগে ১৯৯১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন এবং ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন। এত কিছুর পরও ২০০১ সাল থেকে তাকে মনোনয়ন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বজলুল হক হারুনের মনোনয়ন বাতিল করে দল ও কর্মীবান্ধব অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া বজলুল হক হারুনকে রাজাপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন নেতাকর্মীরা।

ফরিদপুর-২: সাজেদা চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেয়ায় বিক্ষোভ:

জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে সোমবারও বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে সড়কের দুই প্রান্তে শত শত যানবহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন লোকজন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মহাজোটের প্রার্থী জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সলকে দেওয়ার খবর নগরকান্দা-সালথায় প্রচার হলে রবিবার দুপুর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এ সময় কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চরযশোরদী ইউনিয়নের জয় বাংলা মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিকেল ৫টা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এতে ছিলেন চরযশোরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান পথিক, কাইচাইল ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ঠান্ডু, বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তাদের সমর্থকরা।

এ সময় তারা ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে আবারও মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। সেই বিক্ষোভ চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

সোমবার সকাল ১০টা থেকে জেলার নগরকান্দা উপজেলার জয় বাংলার মোড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর অনুসারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ চলাকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঞ্জুমান আরা প্রমুখ। এ সময় বক্তারা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মনোনয়ন না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে বলে জানান।

ময়মনসিংহ-৮: ঈশ্বরগঞ্জে জাপা কার্যালয়ে আ.লীগের হামলা:

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর কর্মী-সমর্থকরা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চালানো এই হামলায় জাপার চারজন আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া মনোনয়নের ঘোষণা না পেয়ে রবিবার দিনব্যাপী মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

রবিবার রাতের হামলায় আহত হন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান, তাঁর ছেলে উপজেলা যুব সংহতির আহ্বায়ক সারোয়ার্দী সুজন এবং জাতীয় ছাত্রসমাজের ও যুবসংহতির দুই সদস্য কাকন ও দীপ্ত তালুকদার।

এ সময় নেতাকর্মীদের তিনটি মোটরসাইকেল ও জাপা কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। আহতদের রাতেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তিনটি রাবার বুলেট ও একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ ঘটনার পর পৌর সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে ঈশ্বরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়নের দাবিতে রবিবার দুপুর ১২টা থেকে মিছিল-সমাবেশ ও রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ঈশ্বরগঞ্জের সাবেক সাংসদ আবদুস ছাত্তারের কর্মী-সমর্থকরা। বর্তমানে এখানকার সংসদ সদস্য মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির ফকরুল ইমাম।

এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন আবদুস ছাত্তারের স্ত্রীর বড় ভাই সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবীব, শ্যালক জেলা যুবলীগের সদস্য মাহাবুবুর রহমান মাহবুব ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমাম মতি।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবীব এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘মনোনয়নের ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ। জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে কারা হামলা চালিয়েছে আমার জানা নেই। অনেকেই ক্ষুব্ধ আছেন। তাদের কেউ করেছেন কি না আমি জানি না।’

গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শাকের হোসেন সিদ্দিকী এ ঘটনায় নয়জনকে আটকের খবর নিশ্চিত করে জানান, এতে কোনো মামলা হয়নি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফকরুল ইমামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. আবদুল মতিন সোমবার সকালে টেলিফোনে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হামলাকারীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের তাড়িয়ে দেয় এবং ঘটনায় জড়িত নয়জনকে আটক করে।’

আরও পড়ুন: মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মির্জা ফখরুল

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদ থেকে সরে যেতে বললেন ড. কামাল

বিশ্ব ইজতেমা নির্ধারিত তারিখে বহাল রাখার দাবিতে স্মারকলিপি

সংসদ বহাল রেখে কেন নির্বাচন, ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

যারা লালন-নজরুল সঙ্গীত শোনে এবং রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে তারা কখনো জঙ্গী হয়না: মনিরুল ইসলাম

গণফোরামে যোগ দিচ্ছেন আ.লীগের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার এবং একুশে টিভির সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরো অনেকে

ফেসবুকে লাইক দিন