সাঁতার কেটে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেন তিনি

ইমান২৪.কম: ১৯৪১ সাল। সাতদিন লাগাতার মুষলধারে বৃষ্টি। টানা বর্ষণে মক্কা নগরীতে বন্যা-পরিস্থিতি। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে পানি থইথই। প্রায় ছয় ফুট পানির উচ্চতা। কিন্তু ভায়াবহ এই বন্যার মধ্যেও পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করেন এক আল্লাহপ্রেমিক যুবক। তার সেই তাওয়াফ ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়।

তাওয়াফকারী ওই যুবকের নাম শায়খ আলি আল আওয়াদি। তার বাড়ি সৌদির প্রতিবেশি দেশ বাহরাইনে। পানিবেষ্টিত কাবাঘর তাওয়াফের ছবিটি প্রকাশের পর বেশ খ্যাতি লাভ করেন। ২০১৫ সালে শায়খ আল আওয়াদি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আট দশক আগের সেই ছবিতে দেখা যায়, শায়খ আল-আওয়াদি পানির মধ্যে সাঁতার কাটছেন। কাবাপ্রাঙ্গণে মাকামে ইবরাহিম থেকে মাত্র দেড় মিটার দূরত্বে আছেন। এদিকে তার ভাই ও বন্ধুরা পেছনে কাবার দরজায় বসে আছেন।

ঘটনা বর্ণনা করে আল আওয়াদি বলেন, তখন মাত্র ১২ বছর আমার বয়স। মক্কার একটি স্কুলে পড়াশোনা করছি। সে সময় লাগাতার সাতদিন বৃষ্টি হয়। তখন ওই বৃষ্টিঘন দিনে দুই বন্ধু ও এক শিক্ষকের সঙ্গে হারাম শরিফে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি- কাবাপ্রাঙ্গণ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত। তখনই হঠাৎ আমি পবিত্র আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ তাওয়াফ শুরু করি।

২০১৩ সালে কুয়েতের টিভি আল-রাই টেভিতে ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন শায়খ আল আওয়াদি। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। এমনকি বাড়ি-ঘর, গাড়ি, ও গবাদি পশু ভেসে যেতে দেখেছি। সাতদিন পর বৃষ্টি থামলে আমার ভাই হানিফ, বন্ধুবর মুহাম্মদ আল তাইয়িব ও হাশিম আল বার মসজিদুল হারামের অবস্থা দেখার জন্য যাই। আমাদের সঙ্গে শিক্ষক আবদুল রউফও ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভালো সাঁতারু ছিলাম। তাই হুট করে মাথায় আসলো- সাঁতার কেটে তাওয়াফ করবো। আমরা চারজন পানিতে সাঁতরাতে শুরু করি। কিন্তু দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আমাদের থামানোর জন্য নানা চেষ্টা করে। তারা ভেবেছিল, সাঁতার কেটে আমরা হাজরে আসওয়াদ চুরির চেষ্টা করছি।

আমি পুলিশকে অনাকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে, আমরা শুধুমাত্র সাত চক্কর দেব। এদিকে অপর দুই বন্ধু ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই তারা সাঁতার বন্ধ করে কাবাঘরের দরজায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।

শায়খ আল আওয়াদি আরো জানানে, ‘পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও তাওয়াফ করতে থাকি। আদেশ অমান্য করছি বিধায় পুলিশ আমাকে গুলি করে বসে কিনা- এই ভয়ে তটস্থ ছিলাম। তবে মনে মনে আনন্দ কাজ করছিল। কারণ, পৃথিবীতে এভাবে সাঁতার কেটে কাবা তাওয়াফের ঘটনা খুবই বিরল। পরে জানতে পারি, পুলিশের বন্দুকে আসলে গুলি ছিল না

সাঁতার কেটে তাওয়াফের দুর্লভ ছবিটি বর্তমানে মসজিদুল হারামের জাদুঘর ও বিভিন্ন প্রাচীন চিত্রকলার দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আল-আওয়াদির ছেলে আব্দুল মজিদ অনেক বছর আগে হজ করতে গিয়ে মক্কা থেকে বাবার দুর্লভ ছবি বাবাকে উপহার দিতে কিনে আনেন।

ফেসবুকে লাইক দিন