সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা যা বলছিলেন
ইমান২৪.কম: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন জোটের দ্বিতীয় বারের মতো ছোট পরিসরে সংলাপ শেষ হয়েছে বুধবার (৭ নভেম্বর)। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেন সংলাপে। প্রায় তিন ঘণ্টার সংলাপে সংবিধান-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ছাড় আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। ১৪ দল- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় জনসভা করার জন্য অভিনন্দন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবের বিপরীতে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমকে আহ্বান জানান। রেজাউল করিম বলেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে রায় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আইনগত ও সাংবিধানিক কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সমঝোতা করলাম।
কেউ যদি আদালতে রিট করে বলে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বেআইনি। তাহলে আরও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। যে সরকার নির্বাচিত হবে, সেটিও অবৈধ হয়ে যাবে।’ এ সময় মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এভাবে বললে তো আর সমঝোতার পথ থাকে না। এখানে তো এসেছি একটা সমঝোতার জন্য। এমন প্রশ্ন তুললে ১৯৯১ সালের নির্বাচনকালীন সরকার, ২০০৭-এর সরকার নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। প্রয়োজন সংকটের সমাধান।’ আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘সাংবিধানিক খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলতে নয়, সমঝোতার জন্য এখানে আসা। আগে একমতে আসতে হবে, সবাই সংকটের সমাধান চাই কি না।’
এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজাউল করিমের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সমঝোতার ভিত্তিতে যে কিছু করবেন, তার সমাধান কোথায়? এরপর সরকারি দলের একাধিক নেতা অশুভ শক্তির ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেন। প্রসঙ্গ বদলে যায়। যাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। এটা রাজনৈতিক ঘটনা কি না, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তখন ড. কামাল হোসেন জাফরুল্লাহর প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমরা কোনো অপরাধকেই সমর্থন করি না।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারও জাফরুল্লার ঘটনার বিষয়ে বলেন, এক্ষেত্রে যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থা নেয়, তাহলে সেটাতে আবার বলতে আসবেন না যে এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ আছে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা কি বাইরে গিয়ে আপনার রেফারেন্স দিয়ে বলব যে আর গ্রেফতার-হয়রানি হবে না?’ তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনারা বলেন। আমিও বলে দেব। কোনো রকম রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে হয়রানি ও গ্রেফতার যাতে না করে, তা প্রশাসনিকভাবে দেখব।’ শেষের দিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, তারা নির্বাচনের পক্ষে। তবে আরও আলোচনা হওয়া দরকার। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সময় আর নেই। এভাবে বসাবসি হবে না। তবে কোনো সমস্যা থাকলেই আইসেন, শুনব।’ তখন ড. কামাল হোসেন বলেন, তফসিল টা একটু পিছিয়ে দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার এখতিয়ার না।
আর তফসিল পেছানোর পক্ষে আমি না। পিছিয়ে দেওয়ার মাঝখানে অন্ধকারের শক্তি। তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় আসতে চাইবে। তফসিল ঘোষণার পরও আলোচনা হতে পারে।’ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো দিনই হবে না। যার হাতে অস্ত্র, তার হাতেই বিচারিক ক্ষমতা? তাহলে আর কী থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী থাকবে। বেসামরিক প্রশাসন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেখানে তারা যাবে।
আরও পড়ুন: খাশোগি হত্যা: সিসি ক্যামেরায় ধরা