মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে: কিছু অভিযোগও রয়েছে

অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে পুলিশ-র‍্যাবের অভিযানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন জায়গায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এই নিয়ে গত তিন সপ্তাহে নিহতের সংখ্যা ৬০ জনে দাঁড়ালো।

পুলিশ এবং র‍্যাবের সূত্রগুলো বলছে, তারা তাদের স্ব স্ব বাহিনীর তালিকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, সমন্বিত তালিকার মাধ্যমেই অভিযান চলছে।

এদিকে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। নিহতদের দু’একজনের পরিবার ঘটনার প্রতিবাদ করে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্যও তুলে ধরেছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার হাবিবুর রহমান মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার পর তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। হাবিবুরের মেয়ে তানজিদা রহমান বলেন, তার বাবা স্থানীয় কোন গোষ্টীর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে তারা বিশ্বাস করেন।

তানজিদা রহমান আরো বলেন,”আমার আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে গেছে, আমরা জানতাম না। পরে বরিশাল কলোনীর দুই জনের লাশ টেলিভিশনের খবরে দেখাচ্ছে। তখন দেখলাম আমার আব্বুর লাশ এবং তার হাতে সিগারেট। কিন্তু তিনি কোনদিন সিগারেট খেতেন না। আমার আব্বু মাদকের সাথে জড়িত ছিল না। কারণ আমার আব্বু বিদেশে ছিল কিছুদিন। বিদেশ থেকে আসার পর আব্বু কোর্ট বিল্ডিংয়ের কাছে নাস্তা বিক্রির দোকান করেছিল।”

এছারা দু’দিন আগে অভিযানে নিহত হয়েছেন রাজশাহীর পুঠিয়া এলাকায় বাসিন্দা লিয়াকত আলী মন্ডল। তার স্ত্রী মেহের বানু বলেছেন, “তাঁর স্বামী আগে মাদকের ব্যবসা করলেও তিনি সেই পথ ছেড়ে এসেছিলেন। এখন তাহলে কি কারণে তাঁর স্বামীর এই পরিণতি হলো?

মানুষ খারাপ থেকে ভাল হয় না? ভাল হতে পারে। আমার স্বামী দোকান দিছে। এছাড়া গরু ব্যবসা করতো। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিল সে।

র‍্যাবের দুইজন এসে বলছে, তারা একটা গরু কিনবে, সেটা দেখে তাকে কিনে দিতে হবে। এই বলে আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার পর তার লাশ পাইছি। আমার স্বামীকে যে ষড়যন্ত্র করি নিয়া যায়া মারলো, এর কি বিচার হবে না?”

মাদক বিরুধী অভিযানে নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ দাবি করছেন, তাদের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে, এরপর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে। আবার কমপক্ষে দু’টি পরিবার দাবি করেছে, তাদের স্বজনকে উঠিয়ে নেয়ার আগে এবং পরে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাছে টাকা দাবি করেছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, গাজীপুরে এমন একটি অভিযোগ তদন্তে গিয়েছিল।”

বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় এমন অভিযান নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক হতে পারে। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই অভিযান শুরু করা হয়েছে।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন দাবি করেছেন, সমন্বিত তালিকার ভিত্তিতেই এই অভিযান চলছে।

মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, “একটা কমবাইন্ড তালিকা তো আছেই। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে যে তালিকা পাওয়া যাচ্ছে,সেগুলো সব মিলিয়ে এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকা মিলিয়েই কমবাইন্ড তালিকা করা হয়েছে”।

ফেসবুকে লাইক দিন