মাক্কি ও মাদানি সূরার মাঝে পার্থক্য
পবিত্র কোরআনের মাক্কি সূরা বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ সূরাগুলোকে বোঝানো হয়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের সময় অর্থাৎ মদিনায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত যা অবতীর্ণ হয়েছে তাও মাক্কি সূরা হিসেবে পরিগণিত হয়।
মাক্কি সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য
১. মাক্কি সূরাসমূহে آيات السجدة অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি অবনত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
২. মাক্কি সূরাসমূহে কাল্লা كلا (কখনও না) শব্দটি আছে।
৩. সূরাতুল হজ ব্যতীত মাক্কি সূরাসমূহে ياأيها الناس (হে মানবজাতি!) কথাটি উল্লেখ আছে, কিন্তু يأيها اللذين آمنوا (হে মুমিনগণ!) বাক্যাংশটি নেই।
৪. মাক্কি সূরাসমূহে তাওহিদ এবং রিসালাতের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
৫. মৃত্যু পরবর্তী পুনরুত্থান, পার্থিব জীবনের সকল কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ মাক্কি সূরাসমূহে বর্ণিত হয়েছে।
৬. মাক্কি সূরাসমূহে পূর্ববর্তী নবি ও তাঁদের অবাধ্য উম্মতের করুণ পরিণতির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
৭. মাক্কি সূরাগুলো আকারে ছোট হলেও অতীব ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ।
৮. মাক্কি সূরাসমূহে বিধর্মীদের রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
৯. মাক্কি সূরাসমূহে অন্যায়ভাবে ইয়াতিমদের সম্পদ ভোগ, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত দাফন প্রভৃতি কুসংস্কার ও খারাপ আচরণ সম্পর্কিত বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
১০. মাক্কি সূরাসমূহে প্রসিদ্ধ বস্তুসমূহের নামে শপথের মাধ্যমে উপস্থাপিত বিষয়ের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে।
১১. মাক্কি সূরাসমূহে বহু দেবতায় বিশ্বাসীদের দাবীকে মিথ্যা প্রতীয়মান করে আল্লাহর সাথে কারো শরিক নেই- এ বিষয়ে বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
১২. মাক্কি সূরাসমূহে বিভীষিকাময় কিয়ামত, বেহেশতের অনুপম শান্তি এবং জাহান্নামের কঠোর শাস্তির বর্ণনা প্রাধান্য পেয়েছে।
পক্ষান্তরে কোরআনের মাদানি সূরা বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পরে অবতীর্ণ সূরাগুলোকে বোঝানো হয়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পরে অর্থাৎ মদিনায় আগমনের পর অবতীর্ণ হওয়া সূরাসমূহ মাদানি সূরা হিসেবে গণ্য।
মাদানি সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য
১. মাদানি সূরাসমূহে ইবাদত, সামাজিক আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, পরস্পরের লেনদেন, হালাল-হারাম, উত্তরাধিকার আইন, জিহাদের ফজিলত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পররাষ্ট্র নীতি, বিচার ব্যবস্থা, দন্ডবিধি, পারিবারিক, আর্থ সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও সমষ্টিগত জীবনের যাবতীয় সমাধানের উল্লেখ রয়েছে।
২. মাদানি সূরাসমূহে বিশেষভাবে আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান জানানো হয়েছে। এতে আহলে কিতাবদের সত্যবিমুখতার কথা এবং তাদের কিতাবসমূহ বিকৃতি সাধনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. মাদানি সূরাসমূহে মুনাফিকদের কপট আচরণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র উদঘাটন করা হয়েছে।
৪. মাদানি সূরাসমূহের আয়াত ও সূরা দীর্ঘ। শরিয়তের সামগ্রিক বিধি-বিধানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে মাদানি সূরাসমূহে।
উল্লেখ্য, মাক্কি সূরার সংখ্যা মোট ৮৬টি। মাদানি সূরার সংখ্যা মোট ২৮টি।