বিলুপ্ত পদেও নিয়োগ: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে

ইমান২৪.কম: তৃতীয় শ্রেণির ৬০২টি পদে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতিতে রীতিমতো নতুন নজির সৃষ্টি করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এই নিয়োগ পরীক্ষার কার্ড ইস্যু, ভাইভা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণে পাঠানো, কোটা নিরূপন সবখানেই ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এমনকি বিলুপ্ত পদেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে মহাজালিয়াতির মাধ্যমে। শুধু তাই নয় যেসব পদ আদতে ছিলোই না বা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে সেসব পদও শূন্য দেখিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই পদে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে এসব নিয়োগে ব্যাপক অর্থ লেনদেন করেছে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট।

যেমন পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান পদে মোট ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ যে ৬ দপ্তরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে হাস মুরগি খামার পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কুড়িগ্রাম এই ৪ টি দপ্তরের পদই বিলুপ্তকৃত। জানা যায়, ৬০২ টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও এর বেশিরভাগ পদই অনেক আগ থেকে মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করেছে। মূলত ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করতেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এই ভুয়া পদগুলোতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। উপরন্তু তদন্ত শেষ না করেই বা এ বিষয়ে কোনো সমাধান না করেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ৪ টি আদেশে সম্প্রতি এ নিয়োগপত্র জারি করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্নীতি-জালিয়াতির পাশাপাশি এমনসব পদে ওই নিয়োগগুলো হয়েছে যেসব পদ অনেক আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, ৬০২ টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও মন্ত্রণালয় পদ বিলুপ্ত করার কারণে আসলে এর বেশিরভাগ পদ ছিলই না। অথচ সেইসব বিলুপ্ত পদেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, এর সবই হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ সচিব রইছ উল আলম মন্ডলের ছত্রছায়ায়।

তিনিই তদন্তের নামে দুর্নীতি-জালিয়াতি ধামাচাপা দিয়ে এসব ভুয়া পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান পদে মোট ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে ৬ দপ্তরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৪ টি পদ বিলুপ্তকৃত (হাস মুরগি খামার পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কুড়িগ্রাম)। কম্পাউন্ডার পদে ২৭ জনকে ২৭ দপ্তরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ৯ টি দপ্তরের পদ (বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ, জকিগঞ্জ, দেলদুয়ার, ঈশ^রগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজিবপুর, ধোপউড়া, ফুলবাড়ী-কুড়িগ্রাম, পাটগ্রাম,পরশুরাম) আগেই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে ভিএফএ, এফএ, এআই পদের অধিকাংশ বিলুপ্ত পদ, যেসব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ভয়াবহ এই নিয়োগ জালিয়াতি তদন্তের জন্য দুদকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পশুসম্পদ অধিদফতরের সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা মনে করেন, তদন্ত কর্মকর্তা সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে এই দুর্নীতির নিয়োগ চূড়ান্ত হতো না। যে অদৃশ্য হাতের প্রত্যক্ষ ইশারায় এই তদন্ত যথাযথভাবে হয়নি এবং অবৈধ নিয়োগ চূড়ান্তÍ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা মনে করেন, এ ধরনের জালিয়াতিমূলক নিয়োগ মন্ত্রণালয় ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এরসঙ্গে জড়িতদের কঠোর বিচার হওয়া উচিৎ।

আরও পড়ুন: 

ফেসবুকে লাইক দিন