বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে প্রতিহত করতে এই রায়: মির্জা ফখরুল

ইমান২৪.কম: হাইকোর্টের আদেশের ফলে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ রায় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে প্রতিহত করতে দেওয়া হয়েছে, জনগণের কাছে এ রায় গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘এই রায় সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টকে প্রতিহত করার জন্য সরকারের ইচ্ছায় এ রায় দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এই রায় জনগণের মাঝে প্রশ্নের উদ্রেক করবে। জনগণ মানবে না। এ রায় জনগণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছে। ঐক্যফ্রন্ট ও নির্বাচন প্রতিহত করতেই এই রায় দেওয়া হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু সরকার আদালতকে ব্যবহার করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এই রায় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।’

উল্লেখ্য, বিচারিক আদালতের সাজার রায় বা দণ্ড উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) স্থগিত করলে কিংবা আপিল চলাকালে কোনও ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল করলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনও বাধা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

দুর্নীতির অভিযোগে বিচারিক আদালতে দায়ের হওয়া মামলার দণ্ড (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করা বিএনপির পাঁচ নেতা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভুঁইয়া, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. মশিউর রহমান এবং ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবদুল ওহাব।

তবে হাইকোর্টের এই রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপিলে দণ্ড স্থগিত হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

এর আগে সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনীত প্রার্থীদের হাতে মনোনয়নের চিঠি তুলে দেয়ার সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি আন্দোলন সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।

তিনি বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেছে। আমরা দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, ভোটের অধিকার ফেরত পাবে।

এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মির্জা ফখরুল। কথা বলা থামিয়ে চোখের পানি মুছতে দেখা যায় তাকে।

পরে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। খালেদাকে মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এসব দাবি নিয়ে জনগণের কাছে গিয়েছি। সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে গিয়েছি। কিন্তু তারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসি সম্পূর্ণ পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে কাজ করছে। বারবার বলেছি- যা কিছু করার তা করা প্রয়োজন। কিন্তু তারা করছে না।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, প্রশাসনেও রদবদলের প্রয়োজন। আমরা বললেও তা করা হয়নি। ইভিএম (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) বন্ধ রাখেনি। পত্র-পত্রিকায় সিইসির (প্রধান নির্বাচন কমিশনরা) ভাগ্নে শাহাজাদা সাজু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। আমরা আগেও বলেছিলাম- তিনি (সিইসি) পক্ষপাত দুষ্ট। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ফখরুল বলেন, এতকিছুর পরও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি এর মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তন সম্ভব এবং জনগণ তার অধিকার ফেরত পাবে।

আরও পড়ুন: মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মির্জা ফখরুল

আ.লীগের মনোনয়ন পেলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগ্নে সাজু

সারাদেশে আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের তান্ডব: লাঠি মিছিল হামলা ভাঙচুর সংঘর্ষ

এবার ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন ড. কামাল হোসেন

আপিলে খালাস পেলেও নির্বাচনে অংশ পারবেন না খালেদা জিয়া: অ্যাটর্নি জেনারেল

ফেসবুকে লাইক দিন