বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী

ইমান২৪.কম: বিশ্ব বাজারে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের শক্ত উপস্থিতি তৈরির জন্য এবং নতুন সুযোগ কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে ২৬-২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ ডিফেন্স পোর্ট টার্কি এক্সপো।

এর নাম দেয়া হয়েছে ডিফেন্স পোর্ট টার্কি-সাউথ এশিয়া। ক্যাপিটাল এক্সিবিশানের সিইও হাকান কুর্ট জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবারের এক্সপো ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, এবারের অনুষ্ঠানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের ৮০টির বেশি সামরিক প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

বিগত দুই দশকে বিদেশী পণ্যের উপর থেকে তুরস্কের নির্ভরতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প। স্থানীয়ভাবেই তারা ৭০% সরঞ্জাম উৎপাদন করছে এবং রফতানিও বেড়েছে তাদের।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা রজব তাইয়েব এরদোগান সম্প্রতি বলেছেন যে, তুরস্ক “প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিদেশের উপর থেকে নির্ভরতা ৭০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নিয়ে এসেছে এবং প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আকার ৬০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে প্রতিরক্ষা রফতানি ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে”। তিনি বলেন: “আমাদের লক্ষ্য হলো আগামী দশকের মধ্যে এই তিন দেশের কাছে আমাদের প্রতিরক্ষা রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া”।

এরদোগান বলেন, “এই লক্ষ্য সহজেই অর্জন করা সম্ভব”। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, নৌ প্রকল্পগুলো পাকিস্তান আর বাংলাদেশে বেশ শক্তিশালী পর্যায়ে রয়েছে। তুরস্ক এখন পাকিস্তানকে বিমান শক্তির একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহের কথা ভাবছে যেখান থেকে নজরদারি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো পরিচালনা করা যাবে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য খুবই উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। এই দেশগুলো বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ২৬ বছরের মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি আসেলসান পাকিস্তানের কাছে ১ বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জামাদি রফতানি করেছে। সবার আগে নৌ প্রকল্প পাকিস্তানের সাথে অন্যান্য প্রকল্পের সাথে তুরস্কের সুরক্ষা সহযোগিতার মেরুদণ্ড হলো বিভিন্ন নৌ প্রকল্প। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে, পাকিস্তানের নৌবাহিনী চারটি জাহাজের জন্য তুরস্কের আসফাত ইনকর্পোরেশানের সাথে চুক্তি করে। জাতীয় জাহাজ (মিলজেম) প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই জাহাজগুলো নির্মিত হচ্ছে। নিজস্বভাবে তৈরি এই জাহাজগুলো আশেপাশের সাগর এলাকায় তুরস্কের শক্তিকেও সুসংহত করেছে। পাকিস্তানের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, দুটো করভেট তুরস্কে এবং দুটো পাকিস্তানে তৈরি করা হবে।

চুক্তিতে প্রযুক্তি হস্তান্তরেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মিলজেম আদা শ্রেণীর জাহাজ নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ২০২০ সালের জুনে। আর এর পরপরই পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য দ্বিতীয় আদা শ্রেণীর করভেটের নির্মাণকাজের শুরু হয় করাচিতে। মিলজেম নৌযানগুলো ৯৯ মিটার লম্বা এবং ওজনে ২৪০০ টন। এগুলো ঘন্টায় ২৯ নটিক্যাল মাইল গতিতে ছুটতে পারে। মিলজেম সাবমেরিন-বিধ্বংসী কমব্যাট ফ্রিগেটগুলোতে রাডার এড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এবং এগুলো পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দেবে।

তুরস্কের নৌ বাহিনীর একই শ্রেণীর করভেটের আদলে এগুলো তৈরি করা হলেও পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রয়োজন বিবেচনায় এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, করাচিতে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর যে করভেটের ডিজাইন প্রকাশিত হয়, সেখানে ১৬ সেলের ভার্টিক্যাল লঞ্চিং সিস্টেম (ভিএলএস) রয়েছে, যেটা তুরস্কের আদা শ্রেণীর করভেটে নেই। আঙ্কারা ও ইসলামাবাদ ২০১৮ সালে আরেকটি চুক্তি করে। চুক্তির অধীনে পাকিস্তানকে ৩০টি টি১২৯ ট্যাকটিক্যাল রিকনেইশান্স ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার সরবরাহ করবে তুরস্ক।

ফেসবুকে লাইক দিন