প্রবাসী বাংলাদেশী পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সৌদি মেয়রের সম্মানপ্রদর্শন

ইমান২৪.কম: সম্প্রতি বেশ কিছু পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক মোহাম্মদ মুলতাজিম নামের একজন সড়ক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সম্মানিত করার বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

সৌদি আরবের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করায় পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের মেয়র ফাহাদ বিন মোহাম্মেদ আল-জুবায়ের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে সম্মানিত করেছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোহাম্মদ মুলতাজিম রাস্তা পরিষ্কার করার সময় দেখতে পান ভারী বৃষ্টি ও বাতাসে সৌদি আরবের জাতীয় পতাকাটি মাটিতে পড়ে আছে। তখনই তিনি সেখানে গিয়ে পতাকার প্রতি সম্মান এবং দেশটির প্রতি তার ভালোবাসা প্রদর্শন করে রাস্তা থেকে পতাকাটি নিজের কাঁধে তুলে নেন। ওই পতাকায় লেখা আছে, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মদে রাসুলুল্লাহ’।

মাটি থেকে পতাকাটি তুলে কাঁধে নেয়ার সেই ছবি মেয়রের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, ওই পরিচ্ছন্নকর্মীকে সম্মানিত করতে পারা ক্ষুদ্রতম একটি প্রচেষ্টা। এর মধ্যমে এমন একজন বিশ্বাসী কর্মীকে স্বীকৃতি দেয়া হলো, যিনি সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু তার দায়িত্বই পালন করছেন না, বরং কঠিন পরিস্থিতিতেও রাস্তা থেকে পতাকা কাঁধে তুলে নেয়ার মতো মহৎ কাজও করেন।

মোহাম্মদ মুলতাজিমকে সম্মানিত করার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশের ডেপুটি মেয়র আল-মুলহিম, মেয়রের জনসংযোগ উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-সুফিয়ান, পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিচালক ডা. হামাদ আল-মাদিনি, দাম্মাম কেন্দ্রীয় পৌরসভার প্রধান আল-শাম্মারি।

“মেয়র এবং তার কর্তৃপক্ষের প্রদর্শিত এই সম্মান নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবিদার। আমি সঠিক জানি না যে, সম্মাননা অর্থ দিয়ে দেয়া হয়েছিল, নাকি নিছক কোনো তুচ্ছ উপহারের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। আমার মনে হয় তাকে রিয়াল দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। বিশেষ করে এসব কর্মীকে যে অল্প পরিমাণ বেতন দেয়া হয় তার আলোকে যে পরিমাণ টাকাই হোক না কেন তা মুখ্য বিষয় না।

আমি জানি না, কোন পৌরসভা কিংবা মেয়ররা তাদের অধীনে থাকা কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে কিভাবে এতো তুচ্ছ পুরস্কার দিতে পারেন। পরিচ্ছন্ন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে শত শত মিলিয়ন রিয়ালের চুক্তি করে সৌদি আরব। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এতো সামান্য পরিমাণ বেতন দেয়, যা তাদের খরচ বহন করার জন্য যথেষ্ট নয়। একজন রাস্তা পরিচ্চন্নতা কর্মীর এক মাসের বেতন রিয়াদ এবং জেদ্দায় একটি উন্নতমানের হোটেলে এক দম্পতির রাতের খাবারের মূল্যের সমতুল্য।

এমন নগন্য পরিমাণ বেতন পাওয়া শ্রমিকদের আমরা কিভাবে তাদের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করার কথা বলতে পারি? যার ফলে এসব শ্রমিক আয়ের অন্য উৎস খোঁজে যাতে তারা তাদের রোজকার খরচ বহনের সাথে সাথে তাদের পরিবারকে টাকা পাঠাতে পারে।

একটি প্রকল্পে কতজন শ্রমিক কাজ করবেন, তারা কি ধরণের কাজ করবেন এবং তারা কত বেতন পাবেন তা আগে থেকেই চুক্তির মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করা উচিত। যাইহোক, এসব বিষয় কোম্পানিগুলোর উপর ছেড়ে দেয়া হয়। আর তারাই শ্রমিকদের কত টাকা দেয়া হবে, কত খরচ হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এসব প্রতিষ্ঠান কম দামে শ্রমিক কিনতে আগ্রহী এবং তাদেরকে অতি নগন্য পরিমাণ অর্থ বেতন দেয়। অপরদিকে তারা এসব পরিচ্ছন্নতা প্রকল্পের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন রিয়াল উপার্জন করে। তারা মাঝেমধ্যে এই বিষয়টি ভুলে যায় যে, এ শ্রমিকরাও মানুষ এবং তারা যদি বুঝতে পারে যে তারা অবিচারের শিকার, তাহলে তারা আর আন্তরিকভাবে কাজ করবে না। ফলে, তারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে যে বেতন পান তার সঙ্গে ব্যায়ের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আয়ের অন্য উৎস খুঁজবেন। কিছু সংখ্যক কর্মী ভিক্ষা করে, আবার কেউ কেউ গাড়ি ধোয়া, সুপারশপের ক্রেতাদের মালপত্র বহন করার কাজ করেন।

অনেকে এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সমালোচনা করে, কাজে অবহেলার এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত কোনো কাজ না করার অভিযোগ করে। তারা আসলে এটা উপলব্ধি করে না যে ওইসব কর্মী শোষণের শিকার, যারা তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ করে তাদের হাতেই সব অবিচার হয়। এসব কোম্পনিগুলোর প্রতিনিধিরা যখন তাদের দেশে যান মূলত তখন থেকেই শ্রমিকদের প্রতি এ অবিচার শুরু হয়, যেখানে দালালের মাধ্যমে তাদেরকে নেয়া হয়। আর এসব দালালরাও প্রতি শ্রমিককে ভাড়া করা বাবদ টাকা নেয়। আর এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এইসব দরিদ্র শ্রমিকদের সম্পত্তি, গহনা বিক্রি করা টাকা থেকে। এসব সম্পদ বিক্রি করা হয় সৌদি আরবে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার জন্য। এসব শ্রমিকের ভালো বেতন, থাকার বিশেষ বাড়ি এবং আরামদায়ক কর্ম পরিবেশের মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়।

যাইহোক, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের মেয়র এবং অন্যান্য প্রদেশের মেয়র এবং একইসাথে পৌরপ্রধানদের উচিত এসব শ্রমিকদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করা। এছাড়াও চুক্তিবদ্ধ সংস্থাগুলো শ্রমিকদেরকে অল্প বেতন দেয়, রাখে গাদাগাদি করে এবং তাদের কাজের পরিবেশও নাজুক। এ অবস্থায় সংস্থাগুলো শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের সঙ্গে অবিচার করছে, যা থামাতে কর্তৃপক্ষের সংগ্রাম করা উচিত। শ্রমিকদের সঙ্গে যথাযথ ব্যবহার করাই হল তাদেরকে সম্মানিত করার সবচেয়ে ভালো উপায়। তাহলে সব রাস্তা পরিছন্নতা কর্মীই মুলতাজিমের মতো সৌদি আরবের পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে রাস্তা থেকে পতাকা কাঁধে তুলে নেবে এই বিশেষ বিবেচনা থেকে যে, আল্লাহর একত্ববাদের কথা পতাকাটি বহন করে, যে একত্ববাদের অর্থ তাদের কাছে অনেক বড় কিছু।

(ড. আলী আল ঘামদি সৌদি আরবের সাবেক একজন কূটনৈতিক। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। অনলাইন সৌদি গেজেটে প্রকাশিত তার এ লেখাটি অনুবাদ করে হয়েছে)

আরও পড়ুন: সংলাপে সন্তুষ্ট নই: ফখরুল

আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না : ওবায়দুল কাদের

সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে যা বলেছেন ড. কামাল

৭ দিনের মধ্যে ধূলোর মতো সব উড়ে যাবে : মান্না

সংলাপে বিশেষ সমাধান পাইনি -ড. কামাল, ৭ দফার আন্দোলন চলবে: রব

ফেসবুকে লাইক দিন