প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার এখনো পায়নি ৩৬ লাখ পরিবার
ইমান২৪.কম: করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের নিম্নমধ্য আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার যে কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী চালু করেছেন এখনো সে টাকা পায়নি ৩৬ লাখ পরিবার। তথ্য বাছাইয়ে অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য তালিকাভুক্তদের টাকা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। টাকা সরাসরি তালিকাভুক্তদের কাছে চলে যাওয়ায় সরকার অতিরিক্ত সতর্কতার আশ্রয় নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমরা তথ্য ভেরিফাই করে সহায়তার টাকা দিচ্ছি। জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বরের তথ্যের সঙ্গে অন্যান্য তথ্য ঠিক না থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এ টাকা পাচ্ছেন না। কারণ সহায়তাটা সরাসরি সুবিধাভোগকারীর কাছে চলে যাচ্ছে। যথাযথভাবে আইডেন্টিফাইড না হলে নগদ সহায়তা ভুল লোকের কাছে চলে যাবে। তাই অত্যন্ত সতর্কভাবে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এজন্য একটু সময় লাগছে।’ এ পর্যন্ত কী পরিমাণ লোককে সহায়তা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৪ লাখ লোককে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আরও ৯ লাখ পরিবারের তথ্য যাচাই-বাছাই হয়েছে। শিগগিরই তারা এ সুবিধা পেয়ে যাবেন। সম্ভবত এ সপ্তাহেই পাবেন।’ তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে যাদের তথ্য মিলছে না তাদের নগদ সহায়তার টাকা দেওয়া হবে না। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা থেকে অনেকেই বাদ পড়ছে। শেষ পর্যন্ত কত লাখ পরিবার এ সুবিধা পাবে জানতে চাইলে ড. কায়কাউস বলেন, ‘৫০ লাখ যে একেবারে ৫০ লাখই হবে বিষয়টি তেমন নয়।
বিবিএসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা ধারণা করেছি এই ৫০ লাখ পরিবার নিম্নমধ্য আয়ের। আমরা ৫০ লাখকে টার্গেট করেছি। এখন দেখা যাচ্ছে যারা নিম্নমধ্য আয়ের তাদের মধ্যে অনেকেই সরকারের বিভিন্ন ধরনের সহয়তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন। কেউ খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন বা অন্যান্য সহায়তার আওতায় রয়েছেন। যারা একেবারে কোনো সহায়তার আওতায় নেই তাদেরই এ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার কারণেই যে ১৪ লাখকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে সেখানে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। সঠিক পরিবারকে দিতে পেরেছি বলে এ বিষয়ে অসন্তোষ নেই। এর অর্থ হচ্ছে একটু বেশি সময় লাগলেও আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিকে এ কর্মসূচির সুবিধাভোগী হিসেবে চূড়ান্তভাবে বাছাই করতে পেরেছি।’
বিশ্বব্যাপী তা-ব চালানো করোনাভাইরাসের থাবা থেকে দেশের নিম্নমধ্য আয়ের মানুষদের খানিকটা স্বস্তি দিতে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তালিকাভুক্ত প্রতিটি পরিবার ২ হাজার ৫০০ টাকা নগদ পাবে। গত ১৪ মে গণভবন থেকে নগদ সহায়তা কর্মসূচির টাকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের মাধ্যমে এ টাকা সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টে চলে যায়। শেরপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমেনা খাতুন গৃহিণী ও স্বামীহারা।
তিনি শ্রমজীবী ছেলের সংসারে থাকেন। করোনায় ছেলের কাজ না থাকায় নিদারুণ কষ্টে আছেন। খাবার জুটলেও ওষুধ কেনার নগদ টাকার সংকটে পড়েছেন। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২ হাজার ৫০০ টাকার নগদ সহায়তার তালিকায় নাম এসেছে জেনে বড্ড খুশি হয়েছিলেন। ঈদের আগে তার নাতির মোবাইলে কনফারমেশন এসএমএসও যায়। কিন্তু অপেক্ষা করেও টাকা পাননি। ঈদের পর আসতে পারে এ আশায় বসে আছেন তিনি। কিন্তু এখনো পৌঁছায়নি বলে জানান আমেনা খাতুন। একই অবস্থা ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেনের।
তিনিও টাকা পাননি। তালিকায় নাম থাকলেও টাকা না পাওয়ার তালিকায় আরও কয়েকজন আছেন ওই ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নওহাটা গ্রামের। ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আমির হোসাইন বাদশা বলেন, তালিকা করে জমা দেওয়া হয়েছে। অনেকে টাকা পাননি, অনেকে পেয়েছেনও। তবে না পাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। তারা ধাপে ধাপে টাকা পাবেন বলে শুনেছি। একই তথ্য জানান শেরপুর জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। তিনি বলেন, আমরা তালিকা করে জমা দিয়েছি। ঈদের আগে অনেকে টাকা পেয়েছেন বলে জানি। সবার টাকাই ধাপে ধাপে আসবে। এজন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, ‘আমার জেলায় এক লাখ লোকের তালিকা করা হয়েছে।
এর আগে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছিল। ঈদের আগেই অনেকের মোবাইলে টাকা এসেছে। তবে এখনো অনেক বাকি আছে, পর্যায়ক্রমে আসবে বলে জানি।’ এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। ৫০ লাখ পরিবারভিত্তিক মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কার্ডে ১২টি তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পরিবার প্রধানের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, জন্মতারিখ, বয়স, লিঙ্গ, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর, মোবাইল নম্বর, পরিবারের সদস্য সংখ্যার (পুরুষ, মহিলা, হিজড়া, শিশু প্রতিবন্ধী আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে) তথ্য নেওয়া হয়েছে।
সরকার পরিচালিত অন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকলে তার নাম, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় সংগৃহীত তথ্য কম্পিউটারের এক্সেল কর্মসূচিতে এন্ট্রি করেন। পরে সেসব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেখান থেকেই সারা দেশের সুবিধাভোগীদের বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে জানা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সহায়তা পাচ্ছেন কি না। এ তালিকা তৈরির সময় অনেক বিতর্ক তৈরি হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বলেছিলেন, তালিকা সংশোধন করে যাদের দরকার তাদের কাছেই সহায়তার টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে। সুত্র: দেশ রুপান্তর