প্যারালাইজড রোগীরাও হাঁটতে পারবে এখন!
ইমান২৪.কম: প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরা সাধারণত চলাফেরা করতে পারেন না। একধরনের অসহায়ত্ব বরণ করে নিতে হয় তাদের। কিন্তু সম্প্রতি পক্ষাঘাতগ্রস্ত তিন ব্যক্তির চলাফেরা সে ধারণাকে পাল্টে দিলো, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে তাদের বাকি জীবন হুইলচেয়ারেই কাটিয়ে দিতে হবে। আর এ অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছেন সুইজারল্যান্ডের একদল চিকিৎসক।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত ওই ব্যক্তিদের মেরুদণ্ডে বৈদ্যুতিক ইমপ্ল্যান্ট বা ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্ক থেকে পা পর্যন্ত সংকেত পৌঁছানোর কাজ জোরালো করেছে। বিষয়টি মেরুদণ্ডের স্নায়বিক যে ক্ষতি হয়েছিল, তার পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে।
গবেষকরা মনে করছেন, এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সক্ষম করে তুলবে। যে রোগীদের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছিলেন তারা হলেন—
১. সুইস নাগরিক ডেভিড এম’যি (৩০), খেলাধুলাসংক্রান্ত এক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পেয়ে সাত বছর ধরে তিনি ইনজুরিতে ভুগছিলেন।
২. নেদারল্যান্ডসের জার্টান ওসকান (৩৫), একজন প্রকৌশলী, সাত বছর আগে গাড়ির ধাক্কায় আহত হন।
৩. জার্মান নাগরিক সেবাস্তিয়ান টোবলার (৪৮), দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আগে সাইকেল চালাতে ভালোবাসতেন এবং চলে যেতেন দূরে।
অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা
ওই তিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি কীভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম হলেন, সে সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেভিডের চিকিৎসক বলেছিলেন তিনি কোনোদিন হাঁটতে পারবেন না। কিন্তু ইকোল পলিটেকনিক ফেদেরার ডি লাওসানের একটি দল বৈদ্যুতিক ইমপ্ল্যান্ট প্রস্তুত করে, যার সাহায্যে ডেভিড আধা মাইলের বেশি হাঁটতে পারেন।
এ সম্পর্কে ডেভিড বলেন, ‘আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক। যা করতে পেরেছি তাতে আমি অনেক বিস্মিত। আমি ভেবেছিলাম অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা ভীষণভাবে আনন্দের, সত্যিই এই অনুভূতি খুব ভালো।’
ডেভিডের চিকিৎসাটি করেছিলেন ডক্টর গ্রেগরি কার্টিন। এ সম্পর্কে কার্টিন বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে শার্লটের সাথে আসি, সে সময় তার বয়স ছিল এক মাস। আমরা যখন ডেভিডকে প্রস্তাব দিলাম, সে তখন আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে বলল, “আমি তোমার আগে হাঁটব”। এরপর শার্লট যখন ১৪ মাস বয়সে প্রথম পা ফেলতে শুরু করল, ততদিনে ডেভিড জেনেভা লেক পর্যন্ত হাঁটা শুরু করেছে।’
ডেভিডের মেরুদণ্ড প্রতিস্থাপন করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের নেতৃস্থানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানীদের একজন লাউসান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসক জোকলেন ব্লোচ। ডেভিডের উন্নতি দেখে তিনিও বিস্মিত।
ডেভিড এখন তার ইমপ্ল্যান্ট যন্ত্র বন্ধ থাকলেও আট কদম হাঁটতে পারেন, ক্রনিক মেরুদণ্ডের জখমের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটল।
এ সম্পর্কে দাতব্য সংস্থা চ্যারিটি স্পাইনাল রিসার্চের বিজ্ঞানী পরিচালক চিকিৎসক মার্ক বেকনের মতে, এ চিকিৎসা এটা প্রমাণ করেছে যে, পক্ষাঘাত নির্মূল করা যায়, অন্তত কিছু ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি রোগীদের জন্য বিকল্প উপায় কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। কিন্তু এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের সামনে কার্যকর একটি মডেল আছে। এই চিকিৎসা সুবিধা লাভ করা প্রথম ব্যক্তি ডেভিড।’
নেদারল্যান্ডসের অধিবাসী প্রকৌশলী জার্টান ওসকানকে চিকিৎসক জানান, তিনি সারা জীবনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। কিন্তু ডেভিডের মতো ইমপ্ল্যান্ট যন্ত্রের মাধ্যমে তিনিও এখন হাঁটতে পারছেন।
সাইকেল চালাতে পারদর্শী জার্মান নাগরিক সেবাস্তিয়ান টোবলার দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর ভেবেছিলেন আর কোনোদিন সাইকেল চালাতে পারবেন না। কিন্তু এখন তিনি বিশেষভাবে তৈরি একটি সাইকেল চালাতে পারেন, যেখানে মূলত তার হাতের শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, আর সামান্য পায়ের অংশ।
বৈদ্যুতিক ইমপ্ল্যান্টের গবেষকরা বিশ্বাস করেন তাদের পদ্ধতি আরও উন্নত হবে এবং যেসব মানুষ আবারও হাঁটার সব আশাই ছেড়ে দিয়েছেস, তাদের মধ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা আসবে। তারা আগামী তিন বছরের মধ্যে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে বড় পরিসরে এই ক্লিনিকাল পরীক্ষার পরিকল্পনা করছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপির নেতৃত্ব হারাবেন খালেদা-তারেক!
৭ দিনের মধ্যে ধূলোর মতো সব উড়ে যাবে : মান্না
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না: মির্জা ফখরুল
অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপে বসতে রাজি প্রধানমন্ত্রী: কাদের