পহেলা বৈশাখ: ইসলাম কী বলে?
পহেলা বৈশাখ কিংবা নববর্ষ পালন ইসলামে জায়েজ হতে পারে? এই উৎসব পালনে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রীতিনীতি বিধর্মীদের কাজের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায় কিনা?
জায়েজ বা না জায়েজ তা ঠিক করার আগে প্রথমে আমরা এ দিবসে কী কার্য পালিত হয় তা নিয়ে ঘেটে দেখি ৷
পহেলা বৈশাখের কার্যাবলী
রমনা বটমূলে সূর্য ওঠার সাথে সমবেত কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়।
মেয়েরা কপালে লাল টিপ/ সিথিতে সিঁদুর দিয়ে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে ঘুরে বেরান ৷ ছেলেরাও পাঞ্জাবী/ ধুতি পড়ে শহরময় ঘুরে বেড়ান।
চারুকলা থেকে এরপর বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক হিন্দু সংস্কৃতি মিশ্রিত এক যাত্রা । বিভিন্ন টিভি চ্যানেল মোটামুটি লাইভ দেখায় সে যাত্রার মিছিল। ঢোল-তবলা-ডুগডুগি বাজিয়ে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে কিংবা মাথায় নিয়ে, ছেলেমেয়ে একসাথে হুল্লোড় করতে করতে নাচতে থাকে মিছিলে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নামের এ যাত্রার মূল উপাদ্য থাকে “সমাজ থেকে অশুভ শক্তি বিদায় করা।”
মাথায় করে নিয়ে বেড়ানো এইসব জীবজন্তুকে তারা অশুভ শক্তি দূর করার প্রতীক বলে মানেন!
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের জামাকাপড় আসে মার্কেটে। নতুন জামা না কিনলে প্রেস্টিজ থাকে না তরুণ-তরুনীদের। কেনাকাটা, সেই উপলক্ষে ঘুরে বেড়ানো ঈদের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয় না। বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলো উন্মুক্ত কনসার্টের আয়োজন করে। নারীপুরুষ কোন ভেদাভেদ ছাড়াই সেখানে ভিড় করে গান শুনে, নাচে, উল্লাস প্রকাশ করে।
বিবরণগুলো জানার পর এখন আপনি এসব অনুষ্ঠানকে কীভাবে দেখবেন ?
উপরের সব কয়টি কাজ পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের আলোকে স্পষ্টতঃ বিদ’আত; হারাম ৷
রাসুলুল্লাহ (সা.), তার সাহাবীরা, পরবর্তী তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের কেউ এই জাতীয় কোন অনুষ্ঠান পালন করেছেন বলে খুঁজে পাওয়া যায় নি। ইসলামি শরীয়া হতে এই সব আচারের কোন বিধান নেই। এই সব অনুষ্ঠানের সাথে যাবতীয় সম্পৃক্ততাকে ইজমা’র পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন সম্মানিত উলামারা।
মুসলমান কেন এমন শিরকী অনুষ্ঠান বর্জন করবে না?
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
ﻗُﻞْ ﺃَﻧَﺪْﻋُﻮ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻔَﻌُﻨَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻧَﺎ ﻭَﻧُﺮَﺩُّ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻋْﻘَﺎﺑِﻨَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺇِﺫْ ﻫَﺪَﺍﻧَﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻛَﺎﻟَّﺬِﻱ ﺍﺳْﺘَﻬْﻮَﺗْﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺣَﻴْﺮَﺍﻥَ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏٌ ﻳَﺪْﻋُﻮﻧَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺍﺋْﺘِﻨَﺎ ۗ ﻗُﻞْ ﺇِﻥَّ ﻫُﺪَﻯ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯٰ ۖ ﻭَﺃُﻣِﺮْﻧَﺎ ﻟِﻨُﺴْﻠِﻢَ ﻟِﺮَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ.
‘হে মুহাম্মাদ ! তাদেরকে জিজ্ঞেস করুণ, আমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকবো, যারা আমাদের উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না? আর আল্লাহ যখন আমাদের সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তখন আবার কি আমরা উল্টো দিকে ফিরে যাবো? আমরা কি নিজেদের অবস্থা সে ব্যক্তির মতো করে নেবো, যাকে শয়তানরা মরুভূমির বুকে পথ ভুলিয়ে দিয়েছে এবং সে হয়রান, পেরেশান ও উদ্ভান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? অথচ তার সাথীরা তাকে চীৎকার করে ডেকে বলছে, এদিকে এসো, এখানে রয়েছে সোজা পথ? বলো, আসলে আল্লাহর হেদায়াতই একমাত্র সঠিক ও নিভুর্ল হেদায়াত এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ্ব জাহানের প্রভুর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করে দাও।’
[সূরা আনআম-৭১]
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন-
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ. رواه أبو داود.
‘যে ব্যাক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরন করবে সে তারই অন্তরভুক্ত হবে।’
রাসুল ﷺ আরো বলেছেন-
من أحب سنتي فقد أحبني، ومن أحبني، كان معي في الجنة أخرج الترمذي
‘যে আমার সুন্নতকে ভালবাসলো সে যেনো আমাকে ভালবাসল ,আর যে আমাকে ভালবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে।’
এ বিষয়ে মহান আল্লাহপাক তার পবিত্র কোরআনে কারীমে এরশাদ করেন-
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإسلام دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ [آل عمران
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।”
[সুরা আল ইমরান, ৮৫]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন :
ﻟِﻜُﻞٍّ ﺟَﻌَﻠْﻨَاْ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻭَﻣِﻨْﻬَﺎﺟًﺎ.
ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ
“তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।”
[সুরা আল মায়িদাহ, আয়াত ৪৮]
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত ভ্রষ্টতা।”
[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৯৯১ ও জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬]
রাসুলুল্লাহ সা. আরো বলেছেন-
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী মহান আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।”
[ মুসলিম, হাদীস ১৫৩৫ ও সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৬০]
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে- “পহেলা বৈশাখ তো আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। এটি তো ধর্মীয় কোন উত্সব নয়। তাহলে এইটা কেন বিদ’আত হবে? বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের বাংলাবর্ষ শুরুর দিনে আমরা তো একটু আনন্দ করতেই পারি।”
উত্তর হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদীনায় যাবার পরে যে দুইটি উত্সব বাতিল ঘোষণা করে মুসলিমদের দুই ঈদের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার একটি ছিল “নওরোজ বা নতুন বর্ষের উত্সব”!
আর কিছু কি বলার আছে এতো কিছুর পরে? তারপরেও অনেক ভাইবোন এর বিপরীতে যুক্তির পাহাড় দাঁড় করাবেন। অবশ্যই এই যুক্তির পাহাড় এর ভিত্তি তাক্বওয়ার উপরে নয়। অনিবার্য অকল্যাণই এর পরিনতি।
আমরা একমাত্র মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করি – তিনি যেন আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে ইসলাম মেনে চলতে সাহায্য করেন। আমীন ৷