ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন রুহুল আমীন

ইমান২৪.কম: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর নতুন কাউকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে নিয়মানুযায়ী এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী না থাকলে আপনাআপনি সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী অধীনে চলে যায়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মারা যাওয়ার পর কাউকে এই দায়িত্ব এখনও দেওয়া হয়নি।

ফলে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে হজ ব্যবস্থাপনাসহ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কার্যক্রমে। তবে শিগগির নতুন কাউকে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ক্ষেত্রে একাধিক সাংসদের নাম আলোচনায় থাকলেও এগিয়ে রয়েছেন ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। আগামী ৩০ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হবে। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হলে যেকোনো সময় মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীই এখন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তবে মন্ত্রিসভায় নতুনমুখ অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় নতুনমুখ কিংবা রদবদলের বিষয়ে আমার কাছে এখনও কোন তথ্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা এলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তা বাস্তবায়ন করবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে সব ফাইল তিনিই নিষ্পত্তি করতেন।

এখন যেসব ফাইল মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। কেননা ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীই এখন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে অফিস চলাকালে এখনও কোনো ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর প্রয়োজন হয়নি বলেও জানান ধর্ম সচিব। সূত্রমতে, গত ১৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর এ মন্ত্রণালয় এখন মন্ত্রীশূন্য। সামনে হজ মৌসুম।

সঙ্গত কারণেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। মন্ত্রীশূন্য এই মন্ত্রণালয়ে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরীকদের মধ্যে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয় নয়, আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়েও রদবদল হতে পারে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শূন্যস্থান পূরণে কাকে বসানো হবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ গুঞ্জন চলছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন সংসদ সদস্যের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন, পটুয়াখালী- ৩ আসন থেকে নির্বাচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি।

এর মধ্যে হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর সম্ভাবনা বেশি বলে অনেকে মনে করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত দুবার সংসদ সদস্য ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালে। বর্তমানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ক্লিন ইমেজের বলে অনেকেই জানিয়েছেন। তাছাড়া জাতীয় সংসদে মোনাজাতের বিষয় এলেই ডেপুটি স্পীকার অনুপস্থিত থাকলে স্পিকার দোয়া পরিচালনার জন্য তাকে দায়িত্ব দেন।

বাকি তিনজনের নাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখে উচ্চারিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগও আছে। নেতাকর্মীরা বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনের বজলুল হক হারুন ধার্মিক লোক। তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারের গত মেয়াদে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণায় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি আরব সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন এই সংসদ সদস্য। কেউ কেউ বলছেন, বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ঘটনায় দারুণভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এ কারণে দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই তার ওপর মনোক্ষুন্ন। পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে তার যথেষ্ট অবদান আছে। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

১৯৯৮ সালে তিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সংস্কারপন্থী হওয়ায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। আলোচনায় থাকা সৈয়দ নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। এখন পর্যন্ত তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারেরই সদস্য ছিলেন। পরে তিনি দলত্যাগ করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু ১৪ দলের শরিক থেকে এবার কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি, সে কারণে এবারও তার সম্ভাবনা কম।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর গত বছরের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওইদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে মন্ত্রিসভার সদস্য ৪৮। গত বছর ১৩ জুলাই সর্বশেষ মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয়। ওইদিন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হন। তারপর মন্ত্রিসভায় আর নতুন কেউ যুক্ত হননি। কোনো রদবদলও হয়নি। সুত্র: ভোরের ডাক

ফেসবুকে লাইক দিন