তিন বছরে চারগুণ বেড়েছে এলপিজির ব্যবহার

ইমান২৪.কম: দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহার বেড়ে গেছে। গত তিন বছরে প্রায় চারগুণ বেড়েছে এর ব্যবহার। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, গাড়ি- তিন ক্ষেত্রেই এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের বহুল উপস্থিতি। সম্প্রতি এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বন্ধের পর এলপিজির ব্যবহার আরো বেড়েছে বলে জানিয়েছেন এ শিল্প-ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র এবং এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১৫ সালে দেশে ২ লাখ ৫০ হাজার টন এলপিজি ব্যবহূত হতো।

২০১৬ সালে এটা ৪ লাখ টন এবং ২০১৭ সালে সাড়ে ৬ লাখ টনে উন্নীত হয়। চলতি বছরে এর ব্যবহার ইতিমধ্যে সাড়ে ৮ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ডিসেম্বর শেষে এটি ১০ লাখে গিয়ে ঠেকবে।দেশের ৬০ শতাংশ এলপিজি সিলিন্ডার এবং ৯৫ শতাংশ এলপিজি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের আর্থিক প্রণোদনাও পাচ্ছে এলপিজি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এলপিজি এবং সিলিন্ডার আমদানিতে শুল্কহার কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর মওকুফ এবং শুল্ক করও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানে এলপিজি কোম্পানিগুলোকে মাত্র ২ শতাংশ অ্যাডভান্স ইমপোর্ট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের উপ সচিব আকরামুজ্জামান বলেন, গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সরকার টেকসই জ্বালানি মিশ্রণ এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটে এলপি গ্যাসের ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে সিএনজির পাশাপাশি অটোগ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এলপিজি এবং এ শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। ফলে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। আর বর্তমানে দেশে বার্ষিক ২০ লাখ টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এলপিজি ব্যবসার জন্য ৫৫টি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন পেয়েছে।

কিন্তু এর মধ্যে অধিকাংশই এখনও উত্পাদনে আসেনি। তবে এলপিজি ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর বিপণনকারী কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। কয়েক বছর আগে সক্রিয় বিপণনকারীর সংখ্যা সাত থাকলেও বর্তমানে তা ১৪। আরো অন্তত ৬টি বাজারে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আর যেগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলো তাদের মজুদাগারের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক আহমেদ বলেন, “২০১৫ সালে এলপি ব্যবসা শুরুর সময় আমাদের মজুদাগারের ধারণক্ষমতা ছিল ৫ হাজার টন। বর্তমানে ৮ হাজার টন। আগামী বছরের জুন নাগাদ তা ১০ হাজার টনে উন্নীত হবে। বর্তমানে ওমেরা বার্ষিক ৩ লাখ টন এলপিজি বিক্রি করছে। লাফস গ্যাস বাংলাদেশে’র পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০০১ সালে ১ হাজার ৮০০ টন ধারণক্ষমতার মজুদাগার নিয়ে আমরা কার্যক্রম শুরু করি।

বর্তমানে আমাদের ৩ হাজার ২০০ টন ক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলেও এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটে অবৈধভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হতো। সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা এবং আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা এলপিজি ব্যবসার সম্প্রসারণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ২২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ চুলা। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ চুলা জব্দ করা হয়েছে।

গত ৩ নভেম্বর সাগরের তলদেশে এলএনজির পাইপলাইনে ত্রুটির পর গত বুধবার পর্যন্ত জাতীয় গ্যাস গ্রিডে দৈনিক ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়। এর ফলে বাসাবাড়ি, দোকানপাট এবং গাড়িতে এলপিজি-অটোগ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি সংকটের কারণে গ্রাহকবৃদ্ধি সাময়িক সময়ের জন্য হলেও এই সাময়িক গ্রাহকদের একটি বড় অংশ ধারাবাহিকভাবে এলপিজি ব্যবহার করতে পারেন।

পেট্রোল ও অকটেনের চেয়ে সাশ্রয়ী হওয়ায় পরিবহন খাতেও অটোগ্যাস বা এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি লিটার অটোগ্যাস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপরীতে অকটেন এবং পেট্রোল যথাক্রমে ৮৯ এবং ৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সিএনজির চেয়ে এর দাম বেশি। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক কোম্পানি পেট্রেডেক এলপিজি ২০০৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম এলপিজির ব্যবহার শুরু করে। ২০১৫ সালের অক্টোবরে লাফস গ্যাস পেট্রেডেকের বাংলাদেশের ব্যবসা অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে এ কোম্পানির আটটি এলপিজি রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন