জাতীয় পার্টিতে পদত্যাগের হিড়িক; কার্যালয়ে তালা!
ইমান২৪.কম: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী মহাজোটের প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
জাপা চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে বুধবার পদত্যাগ করেছেন গাইবান্ধা-২ আসনের প্রার্থী ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রশিদ সরকার।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে কার্যালয়ে তালা ঝুলতে দেখে যায়। ভেতরে পুলিশ ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
তালাবদ্ধ কার্যালয়ে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
এছাড়া আরো একাধিক নেতা পার্টি অফিসে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার গুঞ্জন শোনা যায় । তারা পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছাড়াও কয়েকজন সাংসদ প্রার্থিতার জন্য খোদ চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন।
তবে মহাসচিব হাওলাদার বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি দাবী করেন, তাকে এবং দলকে হেয় করতেই মনোনয়ন বাণিজ্যের ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে ১১০ জন প্রার্থীর তালিকার কথা জানিয়েছেন হাওলাদার। ওই তালিকায় নাম আসা কয়েকজনও মনোনয়নের জন্য অর্থ দেওয়ার কথা বলেছেন সাংবাদিকদের।
নীলফামারী-৪ আসনে জাপার সাংসদ শওকত চৌধুরী পার্টি অফিসে এসে বলেন, মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতা এবং তার কাছ থেকে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মোটা ‘চাঁদা’ নিয়েছেন। তার অভিযোগ, চেয়ারম্যানকে ৬০ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তার মনোনয়ন নিয়ে তালবাহানা হচ্ছে।
হাওলাদার যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে নীলফামারী-৪ আসনে শওকত চৌধুরী পাশাপাশি আদেলুর আদেলের নাম দেখা যায়।
জাপা কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্য করে ক্ষুব্ধ শওকত বলেন, “আমি দেখে নেব। আমার টাকা ফেরত দিতে বলবেন তাকে।”
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এরশাদ সাহেব একবার বলছেন এককভাবে নির্বাচন করব, আরেকবার বলছেন, মহাজোটে যাব। এভাবে দল হয়? দলটাকে নষ্ট করে ফেলেছেন তিনি। দলটাকে কক্ষচ্যুত করেছেন তিনি নিজেই।”
গাজীপুর-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খানের স্ত্রী কালীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি রাহেলা পারভীন শিশির।
এই আসনে গাজীপুর মহানগর জাপার সহ-সভাপতি গাজী ওবায়দুল কবির মজনুও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনিও মনোনয়নের জন্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন।
মজনু বলেন, “মনোনয়ন ফরমের দাম ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে। তারপর আবার দুই হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এক কোটি টাকা চেয়ে অনেকের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করছে। তাহলে উনার (এরশাদ) মত নেতার কাছে আমি কেন আসব?”
“এরশাদ সাহেব নিজে হাতে দলটাকে নষ্ট করে ফেলেছেন। মহাজোটের সঙ্গে রাজনীতি করার পরিস্থিতি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। এভাবে দলটাকে নষ্ট করে ফেলেছেন তিনি। অনেক হল, দলের জন্য আর নয়।”
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর-৫ আসনে প্রার্থিতার আবেদন সংগ্রহ করা মো. সোলায়মান সামি, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের শেখ শরিফুল ইসলামও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ এবং জয়পুরহাট-২ আসনে আবুল কাশেম রিপনও ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগ করেন। তবে পরে মহাসচিবের সাংবাদ সম্মেলনে যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়, সেখানে তাদের নাম দেখা যায়।
মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা কোনো একটি স্থান থেকে এসেছে, আমাকে ও দলকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। সারা জীবন ধরে এ ধরনের কোনো অভিযোগ এল না। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোনো একটি লোক এটা করাচ্ছে।”
দলের নেতারাই এমন অভিযোগ করছেন জানানো হলে হাওলাদার পাল্টা তাদের বিরুদ্ধেই একই ধরনের অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “পয়সা খেয়ে, কোনো জায়গা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা করতে পারে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়কে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট শরিক দলগুলোর ১৩ জন এরই মধ্যে প্রত্যয়নপত্র পেয়েছেন।
তাদের মধ্যে জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জেপি মঞ্জু ১টি ও তরিকত ফেডারেশন ২টি আসনে মনোনয়ন পেয়েছে।
এর বাইরে জাতীয় পার্টি এবং এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারাকেও আসন ছাড়তে হবে আওয়ামী লীগকে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোট শরিকদের জন্য ৬৫-৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষমতা হারালে কেউ রেহাই পাবেন না বাছাধন: আইনমন্ত্রী
জামায়াতের মধ্যেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন : সংবাদ সম্মেলনে নজরুল
নায়ক ফারুকের ইসলাম বিদ্বেশি বক্তব্যে সমালোচনার ঝড়, অতপর মনোনয়ন বাতিল
সরকারি কর্মকর্তার অনুমতি না পাওয়ায় বন্ধ হলো চন্দনাইশের ইসলামী মহাসম্মেলন
>ইজতেমা মাঠের দখল পেতে মাও. সাদপন্থীদের সংবাদ সম্মেলন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা