ইমামের গলায় জুতার মালা: অবশেষে সেই চেয়ারম্যান গ্রেফতার
ইমান২৪.কম: বরিশালে মসজিদের ইমাম শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ঘটনায় দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়িসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের একটি টিম মুলাদী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মোস্তফা রাঢ়ি ও সত্তার সিকদারকে গ্রেফতার করে। এর আগে দুপুরে মামলার আরেক আসামি বজলু আকনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ নিয়ে মামলার মোট তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, মসজিদের ইমাম ও দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল অভিযানে নেমেছে।
চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি ও সত্তার সিকদার মেহেন্দিগঞ্জ থেকে পালিয়ে মুলাদীতে আত্মগোপন করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে মুলাদী থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বুধবার রাতে লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি, সত্তার সিকদার, কবির সিকদার, ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম, মাসুদ সিকদার, আবুল বয়াতি, ইউনুস বয়াতি, মোসলেম সিকদার, বজলু আকন ও মশিউর রহমান বয়াতিকে আসামি করা হয়। লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী এবং স্টিমারঘাটের অদূরে সিকদার বাড়ি মসজিদের ইমাম।
দড়িচর খাজুরিয়া মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, ২০১৯ সালে উপবৃত্তি পাওয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল হিসাব নম্বর পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদরাসায় না আসায় সেখানে শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপ বৃত্তির ১৮শ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর বাবা ৩০ মে মাদরাসায় এসে শহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এবং তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি সালিশের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠক বসে।
সেখানে উপস্থিত থাকতে আগেই শহিদুল ইসলামকে জানিয়ে দেয়া হয়। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হলে আসামিরা শহিদুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। এরপর জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। সেই সঙ্গে ওই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর লজ্জা ও অপমানে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম। এদিকে মসজিদের ইমামকে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা যে সিমে এসেছে সেই সিমটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আর অফিসে নানা কাজের চাপে বিষয়টি মনেও ছিল না। কিন্ত এতো ছোট একটি বিষয় নিয়ে এতো কিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। দীর্ঘ কর্ম জীবনে কেউ কোনো দিন অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু সামান্য একটি ভুলের জন্য আমার ওপর অবিচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি দেখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তারা মামলা করার পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছি।