কওমি স্বীকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা : তিন ভাগে বিভক্ত আলেম সমাজ
ইমান২৪.কম: কওমি শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ায় আগামী ৫ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার যে আলোচনা চলছে—এ বিষয়ে তিনটি পক্ষ দাঁড়িয়েছে কওমি অঙ্গন বা আলেম সমাজে।
এক- আলেমদের মধ্যে যারা সরাসরি বিএনপি করেন বা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে যুক্ত—তারা ‘প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা’ দেওয়া মেনে নিতে পারছেন না। সংবর্ধনার আয়োজন ছোট হোক বা বড়, গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে—কোনোভাবেই তাদের সম্মতি নেই।
কারণ, তারা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনাকে সম্মাননা দেওয়া মানে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে মৌন সমর্থন করা। শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করার পথ সুগম করা। তাই, এটা হতে দেওয়া যাবে না। যে-কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। কারণ, আগামীতে সরকারে আমাদের পছন্দের লোককে বসাতে হবে। তাই, এ মুহূর্তে সংবর্ধনা-টংবর্ধনা দেওয়ার কোনো দরকার নাই!
পুনশ্চ-১ : আমি নিশ্চিত, এই মুহূর্তে সংবর্ধনাটা যদি খালেদা জিয়াকে দেওয়া হত, এই শ্রেণির লোকজনই প্রথম সারিতে থাকতেন—নেত্রীর হাতে ক্রেস্ট বা ফুলের তোড়া তুলে দেওয়ার জন্য।
জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী কিন্তু হেফাজত স্বাধীনতা বিরোধী নয় : প্রধানমন্ত্রী
দুই- আলেমদের মধ্যে যারা সরাসরি আওয়ামী লীগ করেন বা ১৪ দলীয় জোটকে সমর্থন করেন অথবা নতুন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন—তারা যে-কোনো মূল্যে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার পক্ষে। এবং সেটা কোনো ঘরোয়া মজলিস বা ছোট আকারের মঞ্চে নয়; দিতে হবে প্রকাশ্যে, হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে। তবেই-না প্রধানমন্ত্রীর (কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের) যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে!
এই শ্রেণির লোকজন চাচ্ছেন, সরকারকে সাধারণ (ধর্মপ্রাণ) মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয় করে তোলার এটিই মোক্ষম সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। এর মাধ্যমে তারা নিজেরাও কিছু ফায়দা অর্জন করতে পারবেন। সরকারের কাছাকাছি যাওয়া, সামনের নির্বাচন বা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা। ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুনশ্চ-২ : আমার বিশ্বাস, এই সংবর্ধনা যদি খালেদা জিয়াকে দেওয়া হত, তাহলে এই শ্রেণির লোকজনই সবার আগে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন!
ঢাকায় ইজতেমা আয়োজনে বাধা! শঙ্কায় মুসল্লিরা, যে কারন জানা গেল
তিন- আলেমদের মধ্যে যারা বিএনপি বা আওয়ামী লীগ—কোনো দলের সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়। বড় এই দুই দলের কোনো পক্ষকে বিশেষ সমর্থনও করেন না। কেবল ইসলামের স্বার্থেই সংবর্ধনা দেওয়া-না-দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন বা নেওয়ার কথা ভাবছেন। একই সঙ্গে নানা বিষয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। তারা হেফাজতের ৫ মে’র কালো রাতের কথা ভুলতে পারছেন না।
এই শ্রেণির লোকদের কথা হলো, সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে ভালো কথা। কিন্তু এই সরকারই তো শাপলা চত্তরে আমার ভাইয়ের (হেফাজত কর্মীর) বুকে গুলি চালিয়েছে, তাজা রক্ত ঝরিয়েছে, নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তাহলে, এই সরকারকে আমরা সংবর্ধনা দেব কোন হাতে! এতে আমাদের ভাইয়ের রক্তের সাথে বে-ঈমানি হবে না তো!
প্রথম দুই শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে কোনো কথা নাই। কারণ, তারা উভয়েই স্ব স্ব রাজনৈতিক চিন্তা থেকে পক্ষে-বিপক্ষে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে, তৃতীয় শ্রেণির লোকদের উদ্দেশে আমার কথা হলো, শাপলা চত্তরে সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছিল—তাদের কোনো বিচার চেয়েছেন কি? তারা কারা? কাদের ইন্ধনে সেদিন সরকার পতনের চিন্তার হিসাব কষা হচ্ছিল? হেফাজতের মূল দাবি কী ছিল? আন্দোলন কোন পদ্ধতিতে হওয়ার কথা ছিল? শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াল! আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে কারা খেতে চেয়েছিল? কোন নেত্রীর ঘোষণায় প্রশাসন হিংস্র হতে বাধ্য হয়েছিল? কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে টাকা আর ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে?
ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে দেখবেন, ওই রাতের রক্তবন্যার জন্য সরকার যতটা-না দায়ী, তারচেয়েও বেশি দায়ী আমরা নিজেরা। আমাদেরকে যারা এই বিপদে ঠেলে দিয়েছিল, দায়ী তারা।
পর্দাহীনতাই নারী নির্যাতনের মূল কারণ : আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী
অতএব, শাপলার শহীদদের চিন্তা মাথায় রেখে যারা সংবর্ধনা দেওয়াটা সঠিক মনে করছেন না, তাদের সঙ্গে আমি দ্বিমত না করে বলব, উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তরও খুঁজুন। কেবল আবেগ নয়; বিবেকও কাজে লাগাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা দেওয়ার দ্বারা ইসলামের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এই সংবর্ধনার পক্ষে নই আমি। আর যদি বিষয়টা এমন হয় যে—হেফাজতের (৫ মে’র) ঘটনার পর সরকার এবং হেফাজত নেতারা বাস্তবতা উপলব্ধি করে পরস্পরে কাছাকাছি আসতে চায় এবং সরকারের আশপাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বাম-রামদের সরিয়ে ইসলাম পন্থীদের দাবি মোতাবেক রাষ্ট্রপরিচালনার আশ্বাস নিশ্চিত হয়, (ইতোমধ্যে হাইকোর্টের ফতোয়া বিরোধি রায় বাতিল করে বিজ্ঞ মুফতিদের ফতোয়া দানের সুযোগ প্রদান, পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী বিষয়াদী সংস্কার, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণ, কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদানসহ বেশ কিছু কাজের মধ্য দিয়ে এর কিছুটা প্রমাণও তৈরি করছে) তাহলে সংবর্ধনা হতেই পারে। তখন কেবল সংবর্ধনা নয়; আওয়ামী জোটে যোগদানের ব্যাপারেও আপত্তি নেই! যেমনটা ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করেছিলেন শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)।
আমার দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি—একই। উভয়েই ক্ষমতার জন্য জোট বা রাজনীতি করে। অতএব, ইসলাম পন্থীরা নিজেদের শক্তি, কৌশল আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মধ্য দিয়েই নিজেদের নাগরিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় অধিকার আদায় করে নিতে হবে। তবেই না আমাদের সফলতা। তবেই না ইসলামের বিজয়।
—আমিন ইকবাল, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট
(লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া)
যে শাস্তি পাবেন তা কল্পনাও করতে পারবেন না : ড. কামাল
ড. কামাল-কাদের সিদ্দিকীর বৈঠক; যা বললেন কাদের সিদ্দিকী
ঐক্যফ্রন্টে সব শয়তান একত্রিত হয়েছে : কাদের
সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে : ড. কামাল হোসেন