‘কওমি জননী’ এবং কওমি-আওয়ামী মৈত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা
ইমান২৪.কম: দৃশ্যটি ভাবা যায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে যখন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তখন আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল তারা। এতে সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে ছিলেন এইচ এম এরশাদ। এছাড়া আরও ছিল কওমিদের দুশমন মওদুদিবাদী জামায়াতে ইসলাম। সরকারকে পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন তখনকার বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা চত্বর’-এর মাধ্যমে তাদের কান ধরিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছিল। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে দৃশ্যপট উল্টো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বড় সমাবেশে সংবর্ধনা দিয়েছেন সেই কওমি মাদ্রাসাগুলোর হাজার হাজার শিক্ষক-ছাত্র।
তার সঙ্গে একইমঞ্চে এই অনুষ্ঠানে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমিরআল্লামা আহমদ শফী।অনেকে বলেছেন, সমাবেশটা আকারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সমাবেশের প্রায় সমান ছিল। শুধু তাই নয়, যারা সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ করে ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়েছেন, তারা এসে ৪ তারিখ সেসব ভাস্কর্যের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আপনি হয়তো বলবেন, এটি এমন কী! গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা মানুষ জীবনে প্রথম যখন এসব দেখছে, ছবি তুলতেই পারে। ভাস্কর্য সম্পর্কে তাদের মনোভাব এখনও আগের মতোই আছে। সুযোগ পেলে ভাঙবে। আমি খুব দ্বিমত করি না কিন্তু এই বিবর্তনে মুগ্ধ না হয়েও পারি না। তারা নাকি সুযোগ পেলে ফণা তুলবে? তুলতেই পারে।
কিন্তু ৫ বছর তারা ১৩ দফা উদ্ভট দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেনি। সরকারের সঙ্গে কোনও সংঘর্ষে যায়নি, কোনও কওমি মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্র বড় কোনও জঙ্গি অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছে শুনিনি–এটাকে ইতিবাচক হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি কোথায়? ২০১৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল একই মাঠে। এখন কওমিদের দায়িত্ব নিজেদের তাগিদেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের প্রগতিশীল দাবিদাররা কওমিদের ইতিহাসও জানেন না অনেকে।
১৭৫৭ সালে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা নিয়ে ভারতে ব্রিটিশের রাজত্ব শুরু। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত কওমিদের পূর্বসুরিরাই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ করেছেন। নারিকেল বাড়িয়ার যুদ্ধ, বালাকোটের যুদ্ধ–সব যুদ্ধেরই নেতৃত্বে ছিলেন কওমিদের পূর্বসুরি আলেমরা। সর্বশেষ থানাবনের যুদ্ধে হযরত এমদাদুল্লাহ্ মহাজ্জের মক্কী পরাজিত হলে ৫০ হাজার আলেমকে আন্দামানের গাছে গাছে ব্রিটিশরা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। হজরত এমদাদুল্ল্যাহ্ সরকারও গঠন করেছিলেন। দীনেশ ভট্টকে রাষ্ট্রপতি করে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। থানাবনের যুদ্ধে পরাজয় ও ৫০ হাজার আলেম শাহাদাৎ বরণ করার পর মওলানা কাসেম নানুতুবী ১৮৬৬ সালে দেউবন্দে মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন, যেন বিপ্লবী ধারার মৃত্যু না হয়।
তারা কেউ তাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় মাহফিলটাকে শেখ হাসিনার নির্বাচনি প্রচারের মাহফিল করার চেষ্টা করেননি। অবশ্য শেখ হাসিনা নির্বাচিত হলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, এ অপবাদ থেকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ অব্যাহতি পেলো। একইসঙ্গে বিরাট একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় শেখ হাসিনার পক্ষে রয়েছে, তা দেশবাসী ভালোভাবে জানলো এই মাহফিলের মাধ্যমে। জামায়াতিরা যদি বিএনপির পক্ষে, তবে কওমিরাও আওয়ামীর পক্ষে–এটাও বলতে পারেন কেউ কেউ।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট!
অসংগতিতে ভরা মামলা দিয়েই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা দখলের চেষ্টা