এবার ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন ড. কামাল হোসেন
ইমান২৪.কম: সম্প্রতি বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে এবং ড. কামাল হোসেন-মান্নারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, এরা বর্ণচোরা-ভণ্ড। মহাজোটের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ১৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকার যতই ছলচাতুরি করুক এবং প্রহসনের নির্বাচন করার চেষ্টা করুক না কেন— এবার নির্বাচন বয়কট করা হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
‘দেখুন, দ্রুত আমরা নির্বাচন চাই। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমি একদমই সবাইকে বলব, হাত জোড় করে, যে বয়কট-টয়কট একদম আমরা করব না। একবার করে আমাদের যে খেসারত দিতে হয়েছে। এটা আবার যেন কোনোদিনই না দিতে হয়। ওরা যত রকমের দশ নম্বরি করে আমরা ভোট দেব, আমরা হাজারে হাজারে গিয়ে ভোট দেব। আমরা ভোট কেন্দ্র পাহারা দেব।’
‘ক্ষমতায় থেকে সরকার যা কিছু করবে আর জনগণ তা মেনে নেবে— এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। সরকার আর পার পাবে না, তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে।’
এরই প্রেক্ষিতে ২২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী বলেন, ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের কানাকড়িও দাম নেই, সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে লন্ডন থেকে। তাকে সহ আরো কিছু নেতাকে বিএনপি ব্যবহার করছে।’
‘বিএনপি কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার কথা বলছে, এখন যদি আওয়ামী লীগও পাহারা বসায় তাহলে তো সংঘাত হবে।’
‘আমরাও যদি একইভাবে আমাদের নেতা-কর্মী কেন্দ্রে অবস্থান নিতে বলি, তাহলে কি গৃহযুদ্ধ হবে? বিএনপি নেতারা অবিরাম ‘অ্যাগ্রেসিভ’ (আক্রমণাত্নক) মুডে কথা-বার্তা বলছেন, অবিরাম তারা আক্রমণাত্নক ভাষায় কথা বলছেন। তারা গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন।’
‘বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট কেন্দ্র কেন্দ্রে ৩শ’ থেকে ৫শ’ লোক থাকার অর্থ কি? এখন আমরাও যদি ৩শ’ ৫ শ’ লোক কেন্দ্রে কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করি, তাহলে কি হবে? ভোট হবে? না গৃহযুদ্ধ হবে? ভোট হবে না সংঘাত হবে, ভোট হবে না ভায়োলেন্স হবে? আমি প্রশ্ন রাখতে চাই। অবিরামভাবে তারা অ্যাগ্রেসিভ ভাষায়, আক্রমণাত্নক ভাষায় কথা বলছে।’
‘আজকে দেশের জনগণ একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। তারা অবাধ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। বিএনপি নেতারা আক্রমণাত্নক ভাষা ব্যবহার করে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশটাকে নষ্ট করছেন। কেন তারা এমন করছেন?’
‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচারণ করছে কিনা সেটা ইসিকে জিজ্ঞেস করুন। তবে আমার দৃষ্টিতে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আমি পাচ্ছি না। বরং আমরা কিছু অভিযোগ করেছি সে বিষয়ে তারা বলছে আরপিও কাভার করে না আমরা সেখানে আপত্তি করি নাই। কারণ আমাদের অনেক কিছুই ধৈর্য ধরতে হবে।’
‘আমাদের আচারণে টলারেন্সের পরিচয় দেব, ধর্য্যের পরিচয় দেব। কিন্তু বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ টোনে কথা বলছে, সেটা কিন্তু সংঘাতের উস্কানি দিচ্ছে। যেটা এ সুন্দর পরিবেশকে, নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে, নষ্ট করবে। তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারাদার নিয়োগ করার নামে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে।’
এসব বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। সোমবার বিকেল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘লঞ্চিং গণফোরাম-লেড পাবলিক পলিসি ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা স্বাধীনতা বিরোধী।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, অপশাসন দূর করতে জনগণের যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা সুসংহত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই জনগণের বিজয় নিশ্চিত।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে সুশাসন, জনগনের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমার দল ও জোট কাজ করছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জাতীয় ঐক্যজোট ও বিএনপির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনও সংকট হয়নি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জোট ও বিএনপির মধ্যে সংকট হয়নি। জোট হলে তো আসন ভাগ করতেই হয়। আলোচনা কিছুটা শুরু হয়েছে।’ তবে এটা কঠিন কাজ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘পিঠা ভাগ করতে গেলেও টানাটানি হতে পারে। কেউ পাবে, কেউ পাবে না। তবে যে পাবে না সে তার পাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে।’ ফাঁস হওয়া বিএনপির দুই নেতার ফোনালাপে ‘ব্ল্যাকমেইল’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘আশা করছি এ ধরনের ভাষা ব্যবহার হবে না। ভাষার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব কিনা, এ ব্যাপারে মত জানতে চাইলে গণফোরাম সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিরাশ হতে চাই না। ভোটে বাধা দেওয়া হলে তা স্বাধীনতার বিরোধিতার সমান। কারণ, ভোট জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন শুধু তারাই বঞ্চিত হবে না, পুরো দেশের মানুষ বঞ্চিত হবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে কী করবে, সে ব্যাপারে রেজা কিবরিয়া কথা বলেন। তিনি গণফোরামের পক্ষ থেকে কিছু অর্থনৈতিক প্রস্তাব তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মির্জা ফখরুল
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদ থেকে সরে যেতে বললেন ড. কামাল
সংসদ বহাল রেখে কেন নির্বাচন, ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
সারাদেশে আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের তান্ডব: লাঠি মিছিল হামলা ভাঙচুর সংঘর্ষ
যারা লালন-নজরুল সঙ্গীত শোনে এবং রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে তারা কখনো জঙ্গী হয়না: মনিরুল ইসলাম
গণফোরামে যোগ দিচ্ছেন আ.লীগের সাবেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার এবং একুশে টিভির সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরো অনেকে