এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে যুক্তফ্রন্টের আপত্তি নেই: কাদের
ইমান২৪.কম: গণভবনে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলীয় সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিকল্প ধারার সভাপতি প্রফেসর বি. চৌধুরী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দু’পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু হয়ে চলে রাত পৌনে এগারোটা পর্যন্ত। প্রায় তিন ঘন্টার বেশি সময় চলা এই সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে, বিদ্যমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে যুক্তফ্রন্টের আপত্তি নেই। অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সবার বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। অন্যদিকে বিকল্পধারা সভাপতি বি. চৌধুরী বলেছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে ভিন্ন কোন সুর ছিলনা। আমরা একই সুরে কথা বলেছি। তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্টের নেতারা বেশ কয়েককটি বিষয় দাবি হিসাবে তুলে ধরেছে। এর মধ্যে আছে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, সংসদ ভেঙে দিতে হবে অথবা নিষ্ক্রিয় করতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন, এছাড়াও রয়েছে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর আমাদের আর করার কিছু থাকবে না। তখন নির্বাচন কমিশনই সবকিছু করবে। যুক্তফ্রন্টের নেতারা সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সংসদ ভেঙে দেওয়া অথবা নিষ্ক্রিয় করার জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন এরই মধ্যে সংসদের শেষ অধিবেশন শেষ হয়েছে এর ফলে সংসদও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন সেনাবাহিনী বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাদের বিতর্কিত করা ঠিক হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। তাই নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে লোকাল প্রশাসনের অনুরোধে তারা প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করবে। ইভিএম নিয়েও যুক্ত ফ্রন্টের নেতারা দাবি তুলেছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ইভিএম একটা আধুনিক পদ্ধতি। অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন ইভিএমকে কতটা ব্যবহার করতে পারবে তা পরিষ্কার নয়। তবে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে। যুক্তফ্রন্টের বিশেষ অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ইভিএম নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রেসিডেন্ট যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন তাই সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারেন না। এ প্রেক্ষিতে ইভিএম বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি চেয়ে যুক্তফ্রন্ট দাবি তুলেছে জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন রাজনৈতিকভাবে বন্দি যারা বা মামলা হয়েছে এমন তালিকা দিতে সেটা তদন্ত করে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিবেন। তিনি বলেন, যুক্তফ্রন্টের নেতারা অত্যন্ত গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভাবে আলোচনা করেছেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা মনে করতে পারি তারা নির্বাচনে আসবেন। তারা যেসব দাবি তুলেছেন তার সব দাবি তো মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বিশেষ করে সংবিধান পরিবর্তন ও সংশোধন নিয়ে তারা এমন কোন মেজর দাবি করেননি। তাছাড়া তাদের দাবির কিছু তো আমরা মেনে নিয়েছি। সব শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়ারর ব্যাপারে তারা ইতিবাচক।
এর আগে সংলাপের সূূচনায় যুুক্তফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই। যাতে জনগণ তাদের নেতৃত্ব খুঁজে নিতে পারে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ ধারা অব্যাহত থাকুক এবং উন্নয়নের গতি সচল থাকুক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই আমরা চাই। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকলে দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। আমরা সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আসার জন্য যুক্তফ্রন্ট নেতাদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গণভবন জনগণের ভবন। আপনারা এখানে এসেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাই। পরে ডা. বি. চৌধুরীসহ অন্যরা আলোচনায় অংশ নেন।
সন্ধ্যায় বিকল্প ধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীকে নিয়ে একই গাড়িতে করে গণভবনে প্রবেশ করেন বি. চৌধুরী। যুক্তফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন বিকল্প ধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহসভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, মাহবুব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক এবং নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী। অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, ড. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন: সংলাপে সন্তুষ্ট নই: ফখরুল
সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে যা বলেছেন ড. কামাল
৭ দিনের মধ্যে ধূলোর মতো সব উড়ে যাবে : মান্না
সংলাপে বিশেষ সমাধান পাইনি -ড. কামাল, ৭ দফার আন্দোলন চলবে: রব
তৃতীয় দিনেও উত্তাল পাকিস্তান, আন্দোলনকারীদের প্রতি ইমরান খানের হুঁশিয়ারি