এই নৌকা আমার, কেউ আমাকে হারাতে পারবেনা : ফারুক
ইমান২৪.কম: চার দিন আগে জানা যায়, আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-১৭ আসন থেকে লড়বেন মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। এরপর জানা যায়, একই আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও লড়বেন। শুধু তা–ই নয়, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের খানও এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর ফলে এই আসনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা–ই এখন আলোচনার বিষয়।
অনেকে বলছেন, শেষ মুহূর্তে আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ও আবদুল কাদের খান বাদ পড়তে পারেন। এই আসন থেকে লড়বেন এইচ এম এরশাদ। বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার বিকেলে ফারুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি জানি আমিই মনোনয়ন পাব। এই নৌকা আমার।’ গুলশান-বনানী-ঢাকা সেনানিবাস-ভাষানটেকের কিছু অংশ নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন। গত রোববার বিকেলে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার জন্য ফারুককে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
সেই স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ার কথা কখনোই ভাবেননি। ভালোবেসে শুধু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন। কয়েক মাস ধরে শোনা যাচ্ছিল, চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত ফারুক এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। শুরু থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল বাপ-দাদার এলাকা কালীগঞ্জকে ঘিরে। তবে তিনি বলেছিলেন, দেশের যেকোনো জায়গা থেকে লড়ার মতো যোগ্যতা আছে তাঁর। কারণ সারা দেশের মানুষই তাঁর ভালোবাসার এবং খুব আপন।
এরপর দেখা গেল ঢাকা-১৭ আসন থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। দল ও জোট মিলে আরও দুজন প্রার্থী থাকার বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করি। ছোটবেলায় তাঁর স্পর্শ পেয়েছি। তাঁকে ভুলতে পারিনি, কখনো ভুলতে পারবও না, সম্ভবও না। কেন জানি মনে হয়, আমাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা হচ্ছে। তবে এসবে আমি মোটেও বিচলিত নই। আমার মনে হয়, পেছন থেকে বঙ্গবন্ধুই আমাকে বলছেন— ঝড় আসবে রে, ঝড় আসবে।
এই ঝড়কে তোর সামাল দিতে হবে। এই ঝড়কে তোর বুকে নিয়ে সামাল দিতে হবে। ঠান্ডা করে ভালোবাসা বানিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে মানুষের ভেতর।’ মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য অভিনেতা ফারুকের ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে ইতিবাচক সব পোস্ট। সাধারণ মানুষেরাও তাঁকে জড়িয়ে ধরছেন বলে জানান ফারুক। আজ বুধবার বিকেলে ফারুক তাঁর মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অবাক হই মানুষ কেন আমাকে জড়িয়ে ধরে সমস্ত আদর করে দেয়। কখনো কখনো কেঁদে ফেলেন।
তাঁরা এও বলেন, আমাদের কিচ্ছু দরকার নাই, এই সরকারের কাছে কিচ্ছু চাইব না, শুধু তোমাকে চাই—এই যে কথাগুলো আমাকে আবেগতাড়িত করে। অনেক বেশি দায়িত্বশীল করে তোলে।’ এরশাদ সাহেব (এইচ এম এরশাদ) হোক কিংবা অন্য যিনিই আছেন সবাইকে আমি শ্রদ্ধা করি উল্লেখ করে ফারুক বলেন, ‘সবাইকে বলি, আসুন একই মাঠে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করি। আসেন না, একবার দেখে নেই, কার কতটুকু ভালোবাসার শক্তি আছে। কাকে মানুষ কতটুকু ভালোবাসে।
মানুষকে ভালোবাসলেই কিন্তু মানুষও আপনাকে ভালোবাসবে। নতুন যিনি তাঁকেও শ্রদ্ধা করি। আমি বলব, যদি সম্ভব হয় আওয়ামী লীগ থেকে দুজনকেই মনোনয়ন দিন না। হয়তো পাগলের প্রলাপ মনে হবে। কিন্তু আমার পর যাঁকে দিয়েছেন বা দিতে চান নিশ্চয় ভেতরে কোনো ব্যাপার থাকতে পারে। আমার মনে হয় এটা একটা খেলা। এই ধরনের খেলা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে খুব দুঃখ পাব।’ ফারুক মনে করছেন, তাঁর এই আসনে একটা খেলা হচ্ছে। কারা এমনটা করছেন?
জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তি। এদের দেখা যায় না। এটা দানবীয় শক্তি, দেখা না গেলেও কিন্তু অনুভব করা যায়।’ যদি মনোনয়ন না পান সে ক্ষেত্রে আপনার অবস্থান কী হবে? এমন প্রশ্নে ফারুক বলেন, ‘চূড়ান্ত মনোনয়ন পাব কি না, এটা আল্লাহ জানেন। কী করব এই মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে আমি জানি, আমিই পাব। এই নৌকা আমার। যারা চাচ্ছে তারা কেউই নৌকাকে চেনে না। নৌকাকে তারা ভালোবাসতে জানে না। নৌকায় হাত দিয়ে দেখেনি, এটা কোন কাঠের তৈরি।
আমি জানি এই নৌকা কোন কাঠের তৈরি। এই নৌকা আমার।’ শুরু থেকেই তো গাজীপুর-৫ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ফারুক বলেছিলেন, ‘আমি শুরু থেকে বলে আসছি, সারা দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে লড়ার যোগ্যতা রাখি। আমার ধারণা, দল এবং সভানেত্রী শেখ হাসিনা হয়তো ভেবেছেন, আমাকে ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
নেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে আমি শ্রদ্ধা করি। এ দেশের মানুষকে অনেক ভালোবাসি। এ দেশের মানুষও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। এই ভালোবাসার কথা কখনোই ভুলতে পারব না। আমি শুধু ঢাকা-১৭ এলাকার কাজ করব তা কিন্তু নয়, দলের প্রয়োজন ও দেশের মানুষের টানে যেকোনো প্রান্তে ছুটে যাব। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
আরও পড়ুন: ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা স্বাধীনতা বিরোধী