লাশ চুরি হতে পারে, সেই ভয়ে কবরের পাশে পাহারায় স্বজনরা
ইমান২৪.কম: বজ্রপাতে নিহত এক কলেজ ছাত্রের লাশ চুরি ঠেকাতে কবরের পাশে পাঁচদিন ধরে দিনে রাতে পাহারা দিচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। রাত জেগে পাহারাকারীদের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে নিয়মিতভাবে।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামে চোখে পরে এই দৃশ্য। নিহত কলেজ ছাত্রের কবরের পাশে পলিথিনের তাঁবুর কাঠের চৌকি বসিয়ে বসার এবং শোয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লাশ চুরি ঠেকাতে নিহতের স্বজনেরা এ ভাবে আগামী তিন মাস পাহারা দিবেন বলে জানান নিহতের বাবা শহিদুল ইসলাম, মামা মফিজুল হক, মামি কুলসুম বেগম ও স্থানীয় আশরাফুল ও আনছার আলী।
জানা যায়, গত ১লা সেপ্টেম্বর সকালে কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম বৃষ্টি আসার পরে কলার ভেলায় করে নীলকমল নদীতে পলিথিন দিয়ে শ্যালো মেশিন ঢাকতে যায়। এ সময় বজ্রপাতে মারা যায় আরিফুল।
সে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আরিফুল ইসলাম ছোট বেলা থেকেই নানার বাড়িতে থাকতেন এবং সেখান থেকেই পড়াশুনা করতেন। নানা বাড়ির পাশেই মায়ের ক্রয়কৃত জমিতেই তার মরদেহ দাফন করা হয়।
লাশ চুরি ঠেকাতে গত ৫দিন যাবত কবর পাশে স্বজনেরা পাহারা দিচ্ছেন। পালাবদল করে নিহতের নানা আজগার আলী, মামা হাফিজুর রহমান, স্বপন, সোহাগ ও আরিফুলের ছোট ভাই আশিকুর রহমান পাহারা দেন।
দিনে ও রাতে সমানভাবেই জেগে কবর পাহারা দিচ্ছেন তারা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভাগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমোরপুর কদমতলা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে, নিহত আরিফুল ইসলামের মামা মফিজুল হক ও মামি কুলসুম বেগম জানান, ভাগ্নে আরিফুল আমাদের অনেক আদরের ছিল।
ছোট থেকে আরিফুলের মা রাহিলা বেগমসহ তার ৩ ছেলে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে দেখাশোনা করেছি। বর্তমানে আরিফুলের মা রাহিলা বেগম জর্ডানে রয়েছেন। আরিফুলের বাবা-মা পাশে না থাকলেও ৩ ভাইবোনকে আমরা দেখাশুনা করছি।
এর মধ্যে আরিফুল হঠাৎ বজ্রপাতে মারা যায়। বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির লাশের মাথা কবিরাজি শাস্ত্রে নাকি অনেক মূল্যবান। সে জন্য লাশটি চুরির আশঙ্কায় আমরা রাতদিন ভাগিনার কবর পাহারা দিচ্ছি। নানা আজগার আলী জানান, আরিফুল ইসলামের বাবা শহিদুল ইসলাম তার মা রাহিলা বেগমকে ডিভোর্স দেয়। তখন আরিফুল ইসলামসহ তার ৩ ভাই-বোন ছিল শিশু। ৩ শিশুকে নিয়ে রাহিলা বেগম আমার বাড়িতে থাকেন। অনেক কষ্টে ৩ সন্তানকে লালন পালন করেছেন।
আরিফুল এসএসসি পাশ করার পর রাহিলা বেগম পাড়ি জমান জর্ডানে। জর্ডান থেকে বড় ছেলে আরিফুল ইসলামের নামে টাকা পাঠাতেন। ভালোভাবে লেখাপড়ার জন্য খোঁজখবর নিতেন তার মা। বড় স্বপ্ন ছিলো আরিফকে নিয়ে। কিন্তু দরিদ্র সংসারের সে আশা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো। নাতির কবর পাহারা দেবার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিস্তারিত কিছু না বললেও কবরের পাশে পাহারা দেবার কথা স্বীকার করেন। বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, বজ্রপাতে কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম মারা গেছে কিন্তু রাতদিন কবর পাহারা দিচ্ছেন তা আমার জানা নেই।