🍃ইন্টারনেট ব্যবহার ও দৃষ্টি সংযত রাখার উপায় কি?🍃

খারাপ চিন্তাচেতনায় প্রবৃতিকে উৎসাহিত করে অন্যায় ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত করাকে চক্ষুদৃষ্টির ভূমিকা সর্বাগ্রে।তাই তো আল্লাহ তায়ালা চোখের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন–

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

“মু’মিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবিহিত।” (সূরা নূর: ৩০)।

সর্বদা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দেখছেন এমন মানসিকতা রাখলে চোখের হিফাযত হতে পারে। আর কোন আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের সাথে সম্পর্ক রাখলেও অনেক সময় এসব গোনাহ থেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে থাকে।

আর যদি পূর্ণাঙ্গ সতর্ক থাকার পরও এভাবে গোনাহ হয়ে যায়, তাহলে সাথে সাথেই তওবা করবে। আর যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারনে চোখের দ্বারা এরকম গুনাহ হতেই থাকে। তাহলে কিছুদিন পর্যন্ত নেট ব্যবহার বন্ধ করে আত্মশুদ্ধি করে নেবার চেষ্টা করতে হবে। তারপর নিজের উপর আস্থা হলে আবার ব্যবহার করা করা যেতে পারে। মোটকথা হল এখানে সময় নির্দিষ্ট নয়। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণটা হল মূল বিষয়। আর ইন্টারনেট এটি কোন হারাম বস্তু নয়। বাকি ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল এটি ব্যবহার জায়েজ ও নাজায়েজ হওয়া।

عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا تُتْبِعِالنَّظْرَةَ النَّظْرَةَ؛ فَإِنَّمَا لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ “

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ হযরত আলী রাঃ কে বলেন, হে আলী! [সহসা] একবার দেখার পর পুনরায় [কোন বেগানা নারীকে] দেখো না। কারণ, তোমার জন্য প্রথমবারে অনুমতি রয়েছে [যখন তা অনিচ্ছায় হয়ে যাবে], কিন্তু দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৯৭৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৫১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৭৭}

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ إِلَى مَحَاسِنِ امْرَأَةٍ أَوَّلَ مَرَّةٍ، ثُمَّ يَغُضُّ بَصَرَهُ إِلَّا أَحْدَثَ اللهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا “

হযরত আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে কোন মুসলমান কোন নারীর সৌন্দর্যের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায়, অতঃপর সে নিজ চক্ষু নিচু করে নেয়, তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য এক ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার স্বাদ পায়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৭৮}

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

এ সমস্ত কুরআন-হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, দৃষ্টি সংযত রাখা পর্দার একটি মৌলিক বিষয়। আবার পর্দা করা শুধুমাত্র মহিলাদের সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং পুরুষ-নারী নির্বিশেষে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী পর্দা করতে হবে। তাই পর্দা পুরুষ-নারী উভয়ের জন্যেই প্রযোজ্য।

★বর্তমান ইনটারনেট প্রযুক্তিও যেন কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে হয় এবং আমাদের সবার চোখ কুদৃষ্টি থেকে আল্লাহ তায়ালা হেফাযত করুন।
#আমীন

লেখকঃ হযরত মাওলানা আরিফুল ইসলাম

ফেসবুকে লাইক দিন