আন্দোলনের পথে বিএনপি; প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ হাইকমান্ডের
ইমান২৪.কম: সরকারের সাথে চলমান সংলাপে আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি। সেই সাথে নিরাশ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। গতকাল ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও বলেছেন, সরকার সংলাপের নামে ‘ভন্ডামী’ ও ‘প্রতারণা’ করছে। আমরা এদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাবো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ড ইতিমধ্যে তাদের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বার্তা দিয়েছেন।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা, পৌরসভাসহ সকল পর্যায়ে যার যার অবস্থান থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আন্দোলনের মাঠে আমাদের দেখা হবে। রাজপথ ছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর নেই। এই সরকার সংলাপের নামে কালক্ষেপণ করছে। আন্দোলন থেকে বিমুখ করার জন্য প্রহসন চালাচ্ছে। দাবি না মানলে সাত দফাকে সরকার পতনের এক দফায় রূপান্তরিত করতে হবে।’
বেগম খালেদা জিয়া কারা সেল থেকে এমন বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এছাড়া গত ৩০ অক্টোবর লন্ডনে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সংলাপ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, আর সংলাপ নয়, রাজপথের আন্দোলনেই সমাধান আসবে। এ জন্য ৬ নভেম্বর রাজধানীতে জনসভা থেকে কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া শিগগিরই দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসারও প্রস্তুতি চলছে। এবার আন্দোলনে জেলাগুলোর পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের এক বৈঠকে জামায়াত জানিয়েছে, তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, এটা স্পষ্ট যে এখন যে সংলাপ চলছে সেটা হলো সরকারের কালক্ষেপণের একটা কৌশল। বিএনপি আর সংলাপ নিয়ে আশার আলো দেখছেন না। সংলাপে কোন সমাধান হবে না। আন্দোলন ও নির্বাচন দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই অগ্রসর হবো আমরা। আমাদের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আছে আন্দোলনের। এনিয়ে একটা পথনকশাও আছে আমাদের হাতে। আন্দোলনেই সমাধান আসবে। তিনি আরো বলেন, সরকারি দল চাইলে আবার আমরা গণভবনে যাবো। কারণ সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার দায় আমরা নিবো না। আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আমাদের নেতাদের আলোচনা হয়েছে। তবে এবার আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। কারণ আমাদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন আছেন। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তিনিই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একজন নেতা সার্বিক বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের মতামত তুলে ধরেন। এদিকে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রূপরেখা তৈরি করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ছোট পরিসরে ফের সংলাপ হলে তিনি রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীকে দেবেন। সংলাপ না হলে বাহক মারফত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এই প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সংলাপ নিয়ে আমরা যতটা আশাবাদি ছিলাম ততটাই হতাশ হয়েছি। আমাদের কোন দাবিই মানা হয়নি। ফলে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব না হলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি পূরণ করতে হবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংলাপে কোন দাবি পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। নেত্রীকে মুক্ত করতে চাইলে, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে আন্দোলন করতে হবে। তা শুরু হবে উপযুক্ত সময়েই। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংলাপের ফলাফল কি হবে তা এখন দেশের মানুষ চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে। এর ফল শূন্য। এটা একটা তামাশা।
ঐক্যফ্রন্ট নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা দাবি পেশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। উনি আমাদের আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। আমরা দাবি আদায়ে লড়াই করবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। তবে সংলাপও চলতে হবে।
সূত্রঃ মানবজমিন
আরও পড়ুন: এই সরকার একটা ছোট লোকের সরকার: মান্না
কেটে টুকরা টুকরা করে অ্যাসিডে গলিয়ে দেওয়া হয় খাসোগির লাশ!
নিরপেক্ষ আচরণ করলে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আমাদের আপত্তি নেই: বি চৌধুরী
গোপন সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পালালেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা
পাকিস্তানে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও বিশিষ্ট আলেম মাওলানা সামিকে কুপিয়ে হত্যা