অন্য জোটে যাওয়া না-যাওয়া এখনোই উড়িয়ে দেয়া যায় না: এরশাদ

ইমান২৪.কম: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, আবারও জেগে উঠেছে জাতীয় পার্টি, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনশ আসনে নির্বাচন করব আমরা।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দলের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এও বলেন, রাজনীতির মেরুকরণের কারণে অন্য জোটে যেতে হলে আমি একক সিদ্ধান্ত নিবো। এটা এখনোই একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।

এরশাদ বলেন, আমি একা সারা দেশ ঘুরেছি। তখন আমার সাথে কেউ ছিলো না। আজ অনেক লোক আমার সাথে। জাপার দুঃখ ঘুচেছে।

এসময় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার দাবি তুলে স্লোগান দিতে থাকলে এরশাদ তাদের উদ্দেশে বলেন, আমার ওপর ছেড়ে দেও। এখনও মামলা আছে আমার নামে।

তিনি বলেন, এবার জাপার সর্ববৃহৎ মনোনয়ন সংগ্রহ হয়েছে। পার্টি সাংগঠনিক রূপ নিয়েছে, যা ধরে রাখতে হবে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এরশাদ বলেন, সবাইকে প্রার্থী হিসেবে দিতে পারবো না। আমি যাকে যোগ্য ভাববো সে মনোনয়ন পাবেন। আর এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যায়নি। এ জন্য ৩০০ আসনে প্রার্থী আছে কিনা তা দেখতে চেয়েছি। আমরা সফল হয়েছি। যোগ করেন তিনি।

জাপার মনোনয়নপত্র বাংলাদেশ ইসলামী জোট ও বিএনএ সংগ্রহ করেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এই দুটি দল জাপার প্রার্থী হিসেবে যুক্ত হবে।

সমাপনী বক্তব্যে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। অনেক নবীনদের দেখে বেশি খুশি হলাম।

তিনি বলেন, জাপা যখন ক্ষমতায় ছিলো। তখন যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কেউ করতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু উন্নয়ন করার সময় পাননি। তার ধারাবাহিকতা জাতীয় পার্টি ধরে রেখেছিলো।

রওশন এরশাদ বলেন, এক এলাকায় একজন প্রার্থী হবেন, বাকী সবাইকে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিতে হবে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবার আগ্রহ বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইন্টারনেট ও স্কাইপ বন্ধ করেও ঠেকানো গেল না তারেক রহমানকে

এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। প্রশ্ন উঠেছে তার অসুস্থতা কতটা গুরুতর। অবশ্য তিনি সোমবার হাসপাতাল ছেড়ে আসেন।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও এইচ এম এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। সেবার নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দেয়ার পরই তাকে জোর করে সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেন।

-আপনাদের দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কেন সামরিক হাসপাতালে?
-উনি রুটিন চেক-আপের জন্য হাসপাতালে গেছেন। উনি নিয়মিতই যান। হাসপাতাল থেকে উনি কালও চলে আসতে পারেন। দু’এক দিন দেরিও হতে পারে। হাসপাতালের সব বড় বড় কর্মকর্তারা সেখানে উনার দেখাশোনা করছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল পদমর্যাদার লোকজন।

-উনার কি কোন বিশেষ শারীরিক অসুবিধা আছে?
-না, স্বাভাবিক চেক আপ। ব্লাড সুগার, হার্ট, প্রেশার এসব। ব্লাড সেলগুলোও দেখা হচ্ছে।

-রেগুলার চেক-আপই যদি হবে, উনাকে ভর্তি হতে হলো কেন?
-না, উনি প্রায়শই এরকম গিয়ে এক-আধ দিন থাকেন। উনি তো সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে ক্যান্টনমেন্ট তারও একটা আস্থার জায়গা। বাসার চেয়ে কম না। উনি সেখানে এক আধ দিন থাইকা আবার চলে আসেন।

-কবে নাগাদ উনি হাসপাতাল থেকে চলে আসবেন বলে আশা করছেন?
-দু’এক দিনের মধ্যেই আসবেন।

-২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তো উনাকে এভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল?
-(হেসে) দিন তো একভাবে যায় না। সবসময় কি একই রকম যায়? সব সময় তো একই রকম যায় না।
না, অসুস্থতা না। উনি একটু গেছেন, দু্’এক দিন থাকার পর আবার আসবেন। আপনি যদি দু’একদিন পর আমার সঙ্গে কথা বলেন, এটা লাউড এন্ড ক্লিয়ার হবে।

-আপনি কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন, দলের নেতারা কি উনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন?
-আমি নিজে তো দুপুরে আসলাম। আবার একটু আগে কথা বলেছি। কোন অসুবিধা নাই তো। যেটা আপনাদের ভাবনা, তা নয়। যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। বিভ্রান্তিকর। জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা। উনি জাতীয় নেতা। দলের চেয়ারম্যান। সাবেক রাষ্ট্রপতি। সাবেক সেনা প্রধান। এখন একটা নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। এখন এ ধরনের বক্তব্য আসাটা অনাকাঙ্খিত। আমরা নির্বাচনে আছি। এবং উনি নির্বাচনে গুলশান থেকে, রংপুর থেকে নির্বাচন করবেন। আরও দুটি আসনেও কথা হচ্ছে।

-আপনারা যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবেন, সেই আলোচনা কি শেষ করে ফেলেছেন? কে কত আসনে নির্বাচন করবেন?
-আলোচনা খুব স্বাভাবিক এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। চূড়ান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন। সেরকম কোন প্রতিকুল অবস্থা নেই। আমরা শুরু করেছি। আমরা অনেকদূর এগিয়ে আছি। এটা স্পষ্ট হবে। দু’চারদিনের মধ্যে জানাতে পারবো।

-আপনাদের ওপর কি সরকারের দিক থেকে এমন কোন চাপ আছে, যে তাদের সঙ্গেই থাকতে হবে, বিএনপি বা আর কারও সঙ্গে যেতে পারবেন না?
-হ্যাঁ চাপ আছে। সেটা হলো, ভালোবাসার চাপ। আস্থার চাপ। বিশ্বাসের চাপ। সেটা তো উপেক্ষা করা যায় না।

-আপনি বলছেন যে আপনাদের দলের চেয়ারম্যান ভালো আছেন, তিনি নিজের ইচ্ছাতেই হাসপাতালে গেছেন, তাকে জোর করে সেখানে নেয়া হয়নি?
-না, না, নেয়া হয়নি। আপনি ভালো থাকবেন। (এরপর উনি ওবায়দুল কাদের সাহেব ফোন করেছেন বলে লাইন কেটে দেন)।

যা ঘটেছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে:
২০১৩ সালে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ব্যাপক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। শুরুতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও ৩রা ডিসেম্বর হঠাৎ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির এই সিদ্ধান্ত তখন আওয়ামী লীগ সরকারকে ভীষণ বিপাকে ফেলেছিল। তবে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচন যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে।

এরকম এক পটভূমিতে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে র‌্যাব আটক করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয় ঢাকার পত্রিকায়। তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, তিনি আটক হননি, তাকে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে দলের কোন কোন নেতা তখন দাবি করেছিলেন, এরশাদ অসুস্থ নন।

এরপর বেশ কিছুদিন এরশাদকে সামরিক হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ ছিল। তবে ‘অসুস্থ’ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও এরশাদকে গলফ খেলতে দেখা গেছে বলেও সেসময় পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: পুলিশ ইসির অধীন, না ইসি কি পুলিশের অধীন?

তারেকের ভিডিও কনফারেন্স ঠেকাতে স্কাইপি বন্ধ করে দিল বিটিআরসি

ড. কামালের গণফোরামে যোগ দিলেন সাবেক ১০ সেনা কর্মকর্তা

কওমি শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রসঙ্গও থাকছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে

গ্রেনেড হামলায় নিহত আ.লীগের অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ধানের শীষে নির্বাচন করবেন

ফেসবুকে লাইক দিন